মাধুকর ডেস্ক►
অনেকেই চোখের পাতা লাফানোর সমস্যায় ভোগেন। তবে কিছুক্ষণ পর সমস্যাটি নিজেনিজেই ভালোও হয়ে যায়। এই চোখের পাতা লাফানোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা শুভ-অশুভের গল্প। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আসলে চোখের পাতা কাঁপা স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত যেটা অনেকেই জানেন না।
শরীরের যেকোনো অংশের পেশি সংকুচিত হলে তা কাঁপে। এটি খুবই সাধারণ ব্যাপার। আমাদের পেশি আঁশ বা ফাইবার দিয়ে তৈরি, যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে স্নায়ু। কোনো কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে পেশি কাঁপতে শুরু করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেশি কাঁপলে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তবে কখনো কখনো এটি গুরুতর হতে পারে।
রাজধানীর সোবহানবাগে অবস্থিত দীন মোহাম্মদ চক্ষু হাসপাতেলের কনসালট্যান্ট (চক্ষু) ডা. মো. আরমান হোসেন রনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
প্রতিবেদনে তিনি জানান, চোখের পেশি শক্ত হয়ে গেলে চোখের পাতা লাফাতে শুরু করে। ওপর কিংবা নিচ উভয় চোখের পাতাই লাফাতে পারে। অস্বস্তিকর হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি খুব স্বাভাবিক। তবে কিছু লোকের চোখ এত জোরে কাঁপতে শুরু করে যে তাদের চোখে দেখতেও সমস্যা হয়। এ ধরনের অবস্থাকে ব্লেফারোস্পাজম বলা হয়। চোখের পলক কয়েক সেকেন্ড থেকে এক বা দুই মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর রোগের লক্ষণ।
কেন চোখের পাতা লাফায়
চোখের পাতা লাফানোর অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন চোখে চুলকানি, চোখের ওপর চাপ, ক্লান্তি, ঘুমের অভাব, শারীরিক ও মানসিক চাপ, কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত তামাক, ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল সেবন। শুষ্ক চোখ, চোখের পাতা ফোলা এবং কনজাংটিভাইটিসের কারণে চোখের আরও সমস্যা দেখা দেয়।
চোখের পাতা লাফানোর কারণে যা হতে পারে
প্রায়ই চোখের পাতা লাফানোর সমস্যা হলে এর কারণে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে দেখতে সমস্যা হতে পারে।
কিছু অস্বাভাবিক ক্ষেত্রে এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়বিক ব্যাধি-সম্পর্কিত রোগের লক্ষণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চোখের পাতা লাফানো সেই রোগের অন্যান্য লক্ষণের অন্যতম হয়ে দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া এটি মুখের পক্ষাঘাতের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে। ফেসিয়াল প্যারালাইসিসে মুখের একপাশ অবশ হয়ে যায়। ডাইস্টোনিয়া, সার্ভিক্যাল ডাইস্টোনিয়া, মাল্টিপল স্কলেরোসিস, পারকিনসন্স ও ট্যুরেটস সিনড্রোমের মতো স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের কারণেও চোখের পাতা লাফাতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
চোখের পাতা লাফালে, লাল হয়ে গেলে, ফোলা বা পানি পড়ার সমস্যা থাকলে, চোখের ওপরের পাতা ঝিমঝিম করলে, চোখ মিটমিট করে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চোখের পাতা লাফানোর চিকিৎসা
সাধারণত চোখের পলক নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সেটা যদি না হয় তাহলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন কম ক্যাফেইন খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো, সহনীয় গরম কাপড় দিয়ে চোখে সেঁক দেওয়া, মানসিক চাপ কমানো, তামাকজাতীয় দ্রব্য এবং অ্যালকোহল সেবন না করা।