Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • ২ ঘন্টা আগে
  • ২৬ বার দেখা হয়েছে

আজ গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

আজ গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কাঁটাখালী ব্রিজের পাশে বদ্ধভূমিতে শহীদদের স্মৃতিরক্ষায় নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ —ছবি: মাধুকর।

মনজুর হাবীব মনজু, গোবিন্দগঞ্জ►

আজ ১২ ডিসেম্বর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং এদেশীয় পাকিস্তানী দালালদের সৃষ্ট বিভীষিকাময় অন্ধকার দিনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় এই জনপদ। 

৪ ডিসেম্বর সাঘাটা থানা ও ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন গাইবান্ধা মহুকুমা শহর এবং পরবর্তী কয়েক দিনে অন্যান্য থানা শত্রুমুক্ত হলেও গোবিন্দগঞ্জ ছিল পাকিস্তানীদের কবলে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের উপর্যুপরি গেরিলা আক্রমণে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১২ ডিসেম্বর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণে কাটাখালী সেতুর কাছে শত্রুর শেষ ঘাঁটিটি গুড়িয়ে দিলে চুড়ান্ত বিজয়ের চার দিন আগেই হানাদার মুক্ত হয় তৎকালীন রংপুর জেলার প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ। গোবিন্দগঞ্জ শত্রুমুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সম্পুর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হয় তৎকালীন গাইবান্ধা মহুকুমা।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা একেএম শামসুদ্দিনের “গোবিন্দগঞ্জের সেই যুদ্ধ” শিরোনামের একটি লেখা থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে গোবিন্দগঞ্জ থানা সদরের অদূরে রংপুর-বগুড়া সড়কের কাটাখালী সেতুর দক্ষিণপাড়ে করতোয়া নদীকে সামনে রেখে প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করে শক্ত অবস্থান নিয়ে বসে ছিল পাকিস্তানের ৩২ বেলুচ ও ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। বগুড়ার মহাস্থান পর্যন্ত পৌঁছার লক্ষ্যে সেতুটি দখলে নিতে মিত্র বাহিনীর ২০ মাউন্টেন ডিভিশনের ৩৪০ মাউন্টেন ব্রিগেড সেখানে পৌঁছুলে চুড়ান্ত লড়াই শুরু হয়। পালানোর সময় পাকিস্তানীরা কাটাখালী সেতুটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে, এমন অশঙ্কায় তাদের সাথে মুখোমুখি যুদ্ধের বদলে ভিন্ন কৌশলে এগোয় মিত্র বাহিনী। ছোট একটি দলকে দিয়ে নদীর উত্তর দিক থেকে গুলি ছুঁড়ে তাদের ব্যস্ত রেখে পূর্বদিকের কাজলা এলাকা দিয়ে করতোয়া নদী পেরিয়ে দক্ষিণে গিয়ে পিছন থেকে আক্রমণ করে। এর ফলে সামনে ও পিছনে উভয় দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে দিশাহারা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। চুড়ান্ত আঘাত আসে ১১ ডিসেম্বর ভোর রাতে। সেদিন হিলি, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া এবং মহিমাগঞ্জ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে শতাধিক পাকসেনা নিহত হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে দিশাহারা হয়ে পাকসেনারা তাদের পোষাক পরিবর্তন করে লুঙ্গি ও গেঞ্জি পড়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে যায় বলে জানান স্থানীয়রা। ফলে চূড়ান্ত বিজয়ের চারদিন আগেই স্বাধীনতার স্বাদ পান এখানকার মুক্তিকামী মানুষ। সেদিনের এ বিজয়ের খবরে উচ্ছাস আর আনন্দে ফেটে পড়েছিল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সকল মুক্তিকামী মানুষ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি, সাঘাটার পর শত্রমুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ থানাসহ শিল্পাঞ্চল মহিমাগঞ্জ। 

১২ ডিসেম্বর জয়বাংলা স্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে বিজয় আসে এ জনপদে। স্বাধীনতাকামী গণমানুষের তুমুল হর্ষধ্বনী আর মিছিলে মিছিলে বিজয়ের বার্তা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ছাত্র-জনতা গোবিন্দগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে সমবেত হয়ে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তালন করে। স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের গর্বিত পতাকা পতাকা ওড়ে মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল আর রেলস্টেশনসহ সর্বত্র। চুড়ান্ত বিজয়ের চার দিন আগেই হানাদার মুক্ত হয় তৎকালীন রংপুর জেলার প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ আর মহিমাগঞ্জ। মূলতঃ এ বিজয়ের মাধ্যমেই সম্পুর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হয় তৎকালীন গাইবান্ধা মহুকুমা।

এদিকে ১২ ডিসেম্বর গোবিন্দগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ এবং বিভিন্ন  রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad