Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • ২০ ঘন্টা আগে
  • ৪৫ বার দেখা হয়েছে

ফুলছড়ি কলেজে জলাবদ্ধতা ও কক্ষ স্বল্পতায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

ফুলছড়ি কলেজে জলাবদ্ধতা ও কক্ষ স্বল্পতায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

ভবতোষ রায় মনা►

গাইবান্ধা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফুলছড়ি সরকারি ডিগ্রী কলেজ বর্তমানে দুটি গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তীব্র জলাবদ্ধতা এবং পাঠদান কক্ষের ভয়াবহ সংকট। এই দুটি কারণে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে ফুলছড়ি ডিগ্রী কলেজ ১ একর সাড়ে ৬৫ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত হয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে অবশেষে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট সরকারিকরণ হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ, উপধাক্ষ্যসহ ৩৮ জন শিক্ষকমন্ডলী এবং অন্যন্যা কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৪৯ জন কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ২’শ। কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেল, প্রশাসনিক ভবন না থাকায় একাডেমিক ভবনে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছে। এ কারণে শিক্ষাথীদের শ্রেণিকক্ষের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

ফুলছড়ি সরকারি ডিগ্রী কলেজটি তুলনামূলক নিচু এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই কলেজ প্রাঙ্গণ পানিতে তলিয়ে যায়। মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ভবন ও কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ পর্যন্ত হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের কলেজে আসা-যাওয়া করা দুরূহ হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, অনেক সময় ক্লাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থী তানিম আহম্মেদ, রুবেল মিয়া জানান, জলাবদ্ধতার কারণে কলেজে আসা-যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। নোংরা পানিতে ডুবে থাকায় মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে যায় এবং পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। এছাড়া, কলেজের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে আমাদের। দাবি একটাই দ্রুত মাঠ ভরাট করা দরকার। 

জলাবদ্ধতার পাশাপাশি ফুলছড়ি সরকারি ডিগ্রী কলেজ দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান কক্ষের ভয়াবহ সংকটে ভুগছে। বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ২’শ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে মাত্র কয়েকটি কক্ষের ওপর নির্ভর করে কলেজের যাবতীয় ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। এতে একই কক্ষে একাধিক শিফটে ক্লাস নিতে হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন অস্বস্তিকর, তেমনি শিক্ষকদের জন্যও চ্যালেঞ্জিং।

অনেক সময় পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় খোলা আকাশের নিচে বা কলেজের বারান্দায় ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাসগুলো পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা নেই, যা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে বাধা সৃষ্টি করছে।

মিনফা আক্তার ও ঝুনুকসহ একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, একিতো আমাদের জন্য নেই কমনরুম। তারপর আবার গাদাগাদি করে ক্লাসে বসি। বসার জায়গা না থাকলে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। ঠিকমতো ক্লাসরুম না পাওয়ায় আমাদের লেখাপড়ার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সিলেবাস শেষ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, "এমন প্রতিকূল পরিবেশে মানসম্মত পাঠদান কার্যক্রম চালানো খুবই চ্যালেঞ্জিং। একটি ভালো একাডেমিক পরিবেশ না থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। আমরা চেষ্টা করেও সব শিক্ষার্থীর কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারছি না।"

ফুলছড়ি সরকারী ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক গোলাম মোস্তফা আকন্দ বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শ্রেণিকক্ষে পৌঁছানোর জন্য পানি ভেঙে বা পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ক্যাম্পাস বা ক্লাসরুমের আশেপাশে পানি জমে যাওয়া এ জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতেও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। 

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব শফিউদ-দৌলা আকন্দ শফি বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চেয়েছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনে আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও সংস্কার এবং পাঠদান কক্ষের সংকট নিরসনে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। অন্যথায়, এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথ কঠিন হয়ে পড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। 

এ প্রসঙ্গে ফুলছড়ি সরকারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম আশাদুল ইসলাম জানান, "আমরা সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী অবকাঠামো বাড়েনি। আমরা চাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।"

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad