আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ ►
অবশেষে দীর্ঘ ভোগান্তির পর নওগাঁর রাণীনগর হয়ে নাটোর জেলার কালীগঞ্জ যাওয়ার ২২কিলোমিটার সড়কের নতুন পাঁকাকরনের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে আঞ্চলিক এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে পার্শ্বরাস্তার সংযোগস্থলের পাকাকরণ কাজ চলমান রয়েছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে রোড মার্কিং এর কাজ শেষ করে সড়ক বিভাগের কাছে সড়কটি আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র।
নওগাঁ সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সাংসদের অনেক চেস্টার পর দীর্ঘ প্রায় ৬বছর পর নতুন করে কাজের দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করার পর গত বছরের আগষ্ট মাস থেকে শুরু হয় এই কাজ। সড়কের কাজ সম্পন্ন হওয়ার ফলে নওগাঁসহ বগুড়া, নাটোরসহ কয়েকটি জেলার লাখ লাখ মানুষ নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুব সহজেই চলাচল করতে পারছেন বিশেষ করে ধান অধ্যুষিত অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকরা বেশি উপকৃত হচ্ছেন।
নওগাঁ সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২২কিলোমিটার সড়ক স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে প্রথম পাকাকরনের কাজ করা হয়। এরপর রাস্তায় যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এলাকার জনমানুষের জীবনমান উন্নয়নে এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগে স্থানান্তর করা হয় সড়কটি। গত ২০১৮ইং সালের শেষের দিকে সড়কটি আরো প্রশস্তকরণ, টিকসই ও মজবুতকরণের জন্য নতুন করে পাকাকরণের টেন্ডার দেয়া হয়। এতে ২২কিলোমিটার সড়ক, ২৯টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০৫কোটি টাকা। ওই বছরই সড়কের সমস্ত কার্পেটিং তুলে কোন রকমে রোলার দিয়ে ফেলে রাখে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এছাড়া সেতু-কালভার্ট নির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ না করে বার বার সময় চেয়ে আবেদন করতে থাকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অতিরিক্ত সময়েও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করায় গত ২০২১সালের মে মাসে কাজের চুক্তিপত্র বাতিল করে ৪কোটি টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয় ওই ঠিকাদারের। এরপর নতুন করে আবারো টেন্ডার দেয়া হলে টেন্ডারের বিরুদ্ধে মামলা করেন আগের ঠিকাদার। ফলে আবারো কাজ আটকে যায়। এতে করে নতুন দীর্ঘ ভোগান্তিতে পরে এলাকার লাখ লাখ মানুষ। একপর্যায়ে সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সাংসদের জোরালো তৎপড়তার কারণে ২০২১সালের নভেম্বর মাসে মামলা নিষ্পত্তি হলে আবারো টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত বছরের ১০আগষ্ট মাসে ২২কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের জন্য ৩৮কোটি ৩৪লক্ষ ২০হাজার ৫শত ৮১টাকা ৮৩ পয়সা ব্যয় ধরে টেন্ডার অন্তে নতুন কার্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এম এ জাহের লিমিটেড এই কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পায়।
নতুন পাকাকরণ সড়কে চলাচল করতে পারায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে পথযাত্রী রাকিবুল ইসলাম, সাইম উদ্দীন, জুবায়ের হোসেনসহ আরো অনেক যাত্রীরা বলেন, গত ৬বছর ধরে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তা বর্ণনা করার মতো নয়। অবশেষে ভোগান্তি নামক সেই দু:খ্যের আগুনে শান্তির পানি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে নতুন করে উন্নয়নের মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করছেন। সড়ক যখন খারাপ ছিলো তখন রাণীনগর থেকে আবাদপুকুর মাত্র ১৪কিমি রাস্তা যেতে সময় লাগতো ১থেকে দেড় ঘন্টা যেখানে নতুন সড়ক হওয়ার কারণে সময় লাগছে মাত্র ১০-১৫মিনিট। দ্রুত এই জনগুরুত্বপূর্ন সড়কটির পাকাকরণের কাজ শেষ করায় লাখ লাখ মানুষের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি রইলো অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমএ জাহের লিমিটেডের মুখপাত্র ও সাইড ইনচার্জ মো: সাইফুল ইসলাম বলেন সরকারের অঙ্গিকার মোতাবেক শহরের সুবিধা গ্রামে পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে, দীর্ঘ দুর্ভোগ থেকে এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে মুক্ত করতে এবং স্থানীয় সাংসদের অনুরোধক্রমে কয়েক কোটি টাকা লোকসান দিয়ে কোম্পানী এই কাজটি সম্পন্ন করলো। আমরা সড়ক বিভাগের সার্বিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সিডিউল মোতাবেক কাজ করেছি। আমি আশাবাদি নতুন এই সড়কের মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসবে। সবকিছু আবার নতুন করে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
নওগাঁ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক রাসেল বলেন প্রতিনিয়তই সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের কঠোর মনিটরিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে সড়কের পাঁকাকরণ কাজ। সড়কটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হলেই আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিবো। দীর্ঘ দুর্ভোগ শেষে এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষদের সরকারের আধুনিক যোগাযোগের নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পেরে আমরাও আনন্দিত।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন ২০১৯সালের উপ-নির্বাচনে আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এই সড়কের পাঁকাকরনের কাজ আবার নতুন করে শুরু করার জন্য সড়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভাগীয় পর্যায়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দুয়ারে অনেকবার ধর্না দিয়েছি। অবশেষে সকল জটিলতা কাটিয়ে নতুন পাকাকরণ কাজ সম্পন্ন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগ্রহের কারণেই এলাকাবাসীর কাছে দেওয়া আমার অঙ্গিকার দ্রুত শতভাগ সফল করতে পেরেছি। এই সড়কের প্রতি সুদৃষ্টি প্রদান করায় আমি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি শতভাগ আশাবাদি জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামীতেও আমার নির্বাচনী এলাকার সার্বিক উন্নয়নের প্রতি সুদৃষ্টি প্রদান অব্যাহত রাখবেন।