Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১-২-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:১৫

ভলিবল ছেড়ে এক পাহাড়িকন্যার কাবাডিতে আসার গল্প

ভলিবল ছেড়ে এক পাহাড়িকন্যার কাবাডিতে আসার গল্প

মাধুকর ডেস্ক ►

খেলাধুলায় পাহাড়িকন্যাদের গল্প উঠলেই এখন সবার আগে আসে মনিকা চাকমা, রূপনা চাকমা, আনুচিং মগিনি, আনাই মগিনি ও রিতু পর্না চাকমাদের নাম। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর সাবিনা-কৃষ্ণাদের মতো তারাও এখন দেশের মানুষের কাছে প্রিয় নাম। রিতু-মনিকাদের সেই পাহাড়ি অঞ্চল থেকেই এবার কাবাডিতে আলো ছড়িয়েছেন নবর্ষী চাকমা নামের আরেক যুবতী।

নবর্ষী চাকমার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, যা ভলিবল খেলার জন্য কার্যকরী। স্কুলের শিকের পরামর্শে ভলিবল দিয়েই খেলাধুলা শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরে আবার শিকের পরামর্শেই কাবাডি খেলা শুরু করেন নবর্ষী। প্রথম করপোরেট নারী কাবাডিতে নিজ দল ঢাকা টুয়েলভের হয়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে সবার নজরে এসেছেন ২০ বছর বয়সী এই যুবতী। প্রথম করপোরেট নারী কাবাডি লিগে পাহাড়ি অঞ্চলের ৮ জন মেয়ে খেলেছেন। তবে তাদের মধ্যে নবর্ষীর পারফরম্যান্সই সবার নজর কেড়েছে বেশি।

নবর্ষীদের বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার জুরাসুরি উপজেলায়। অন্য খেলার তুলনায় ওই এলাকায় কাবাডির প্রচলন বেশি। অনেক পাহাড়ি মেয়ে ফুটবলে আলো ছাড়লেও নবর্ষীদের উপজেলার কোনো ফুটবলার এখনো জাতীয় পর্যায়ে খেলেনি। এখানে মেয়েরাও বেশি খেলেন কাবাডি। তবে নবর্ষী নিজের কাবাডি খেলায় আসার গল্পটি ভিন্ন। তিনি খেলাধুলা শুরু করেছিলেন ভলিবল দিয়ে। কাবাডিতে এসে এখন থিতু হয়েছেন দেশের জাতীয় এই খেলায়।

‘আমি ভুবনজয় স্কুলে পড়তাম। সহকারী প্রধান শিক আমাকে বলেছিলেন, তুমি তো অনেক লম্বা। ভলিবল খেলো, ভলিবল খেললে ভালো করবা। আমি ভলিবল খেলতে অনুশীলন শুরু করলাম। প্রতিদিন প্র্যাকটিসে আসতাম। একদিন ওই স্যারই আমাকে আবার বললো কাবাডি খেলতে। তারপর থেকে আমি কাবাডি খেলতে শুরু করলাম। কাবাডি খেলেই এ পর্যন্ত এসেছি’-নিজ দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কাবাডি কোর্টে দাঁড়িয়েই বলছিলেন নবর্ষী।

পরিবারের অন্য কেউ খেলাধুলা করেন না। দুই বোনের মধ্যে বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। নবর্ষী গণবিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিার্থী। বাবা-মা দুজনই শিকতা করেন। বাবা বুদ্ব চন্দ্র চাকমা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক, মা কামনা চাকমা শিকতা করছেন একটি এনজিও স্কুলে।

প্রথম করপোরেট নারী কাবাডি লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা টুয়েলভ। এই দলের শিরোপা জয়ে অনেক অবদান এই রেইডারের। পুরো লিগে নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট নবর্ষী বলেন, ‘আমি নিজের পারফরম্যান্সে অনেক সন্তুষ্ট। কারণ, আমি ভালো খেলেছি। ভালো খেলে আমি দলের জন্য কিছু পয়েন্ট এনে দিতে পেরেছি। তবে আমি ভালো খেলেছি বলেই যে, দল জিতেছে তা নয়; আমরা সবাই কোর্টে ভালো খেলেছি। ফাইনালে সবাই ভালো খেলতে পেরেছি বলেই আমরা জিতেছি।’

দুর্দান্ত এক ফাইনাল হলো। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আপনারা জিতলেন। এক পর্যায়ে তো ম্যাচে সমতা ফিরে এসেছিল। তাও শেষ দিকে। তখন কি মনে হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হতে পারবেন? ‘আমরা যে দলটির বিপে ফাইনাল খেললাম দলটি অনেক ভালো। আমরা খুব ভয়ে ছিলাম, কি করবো তা নিয়ে দ্বিধান্বিতও ছিলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। কারণ, প্রতিপ অনেক ভালো দল। জিততে হলে তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে খেলতে হবে ভেবে উঠতে পারছিলাম না। তবে ভাগ্যে আছে বলেই আমরা আজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। শেষ পর্যন্ত আমরা নাটকীয়ভাবেই জিতলাম। আমাদের আইকন খেলোয়াড় ও অধিনায়ক রেখা আক্তারী কয়েক সেকেন্ড বাকি থাকতে ঝুঁকি নিয়ে একটি পয়েন্ট না আনলে হয়তো আরও খেলতে হতো। আরও সময় লাগতো ম্যাচ শেষ করতে।’

পার্বত্য অঞ্চলের অনেক মেয়ে ফুটবল খেলেন জাতীয় দলে। আপনি কি তাদের কাউকে চেনেন? ‘আমাদের উপজেলার কোনো মেয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলেনি। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের যারা জাতীয় দলে খেলেন তাদের নাম জানি। রিতু পর্না চাকমা, মনিকা চাকমা, আনুচিং মগিনি, আনাই মগিনি, রূপনা চাকমারা ফুটবল খেলেন। তবে আমি কখনো ফুটবল খেলিনি’-বলছিলেন নবর্ষী চাকমা।

ক্যারিয়ারে প্রথম বড় কোনো আসরে অংশ নিয়ে ভালো খেলেছেন। এখন আপনার ল্য কি? ‘আমি এখন পুলিশ টিমে আছি। করপোরেট লিগে খেলে এখন আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সামনে এশিয়ান গেমস ও এসএ গেমসের জন্য ক্যাম্প শুরু করবে ফেডারেশন। যদি ক্যাম্পে ডাক পাই, তাহলে আরও পরিশ্রম করে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার চেষ্টা করবো। আর জাতীয় দলে সুযোগ পেলে দেশের জন্য ভালো খেলার এবং টিকে থাকার চেষ্টা করবো’-আগামীর প্রত্যাশার কথা শোনালেন নবর্ষী চাকমা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad