• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৭-৫-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৫:২০
  • ১৪৭ বার দেখা হয়েছে

সৈয়দপুরে শুকনা মৌসুমেও রাস্তায় রাস্তায় পানি, চলাচলে ভোগান্তি, পরিবেশ দূষণ

সৈয়দপুরে শুকনা মৌসুমেও রাস্তায় রাস্তায় পানি, চলাচলে ভোগান্তি, পরিবেশ দূষণ

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►

বৃষ্টি নেই, বন্যা নেই তবুও রাস্তায় হাটু পানি। বাসাবাড়ির ব্যবহৃত পানিতেই দিনের পর দিন তলিয়ে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়ক। কোথাও কোথাও রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরেও প্রবেশ করেছে ড্রেনের ময়লা পানি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করায় স্থায়ী রুপ নিয়েছে এই জটিলতা। পায়ে হেটে চলাচল তো দূরের কথা যানবাহনেও যাতায়াত দূরহ হয়ে পড়েছে। শিশুরা স্কুলে আর মুসল্লিরা মসজিদে যেতে পারছেনা। তার উপর দীর্ঘ দিন থেকে জমে থাকা এই নোংরা ময়লাযুক্ত পানিতে গ্রীষ্মের তীব্র রোদ পড়ে পঁচে উৎকট দূর্গন্ধ ছড়িয়ে চারপাশের পরিবেশে চরম দূষণ ঘটিয়েছে। ফলে অবর্ণনীয় ও অসহনীয় দূর্ভোগে পড়েছে পৌরবাসী। 

এমন বেহাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভায়। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার নাগরিকরা আজ তৃতীয় শ্রেণীর সেবা থেকেও বঞ্চিত হওয়ায় এই দশায় নিপতিত। বছরের পর বছর ধরে এই অবস্থায় থাকলেও পৌর পরিষদ জনদূর্ভোগ লাঘবে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে। এলাকাবাসী বার বার দাবী ও ক্ষোভ জানালেও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। গত তিন বছরে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শহরের ৮ নং ওয়ার্ডের হাতিখানা এলাকার ক্যাম্পের সামনের রাস্তার পুরোটাজুড়ে পানি। কোন কোন বাড়ির আঙ্গিনাও পানিমগ্ন। লোকজন তার মধ্যেই যাতায়াত করছে বাধ্য হয়ে। শিশু ও বৃদ্ধরা চলাচল করতে পারছেনা। অসুস্থদের হাসপাতালে নেয়া খুবই অসুবিধা।

একই অবস্থা ১৩ নং ওয়ার্ডের বাঁশবাড়ী শহীদ নুর মুহাম্মদ সড়ক, ১২ নং ওয়ার্ডের নতুন বাবুপাড়ায় খ্রীষ্টানপাড়ার ভিতর দিয়ে মন্ডল ভবন হয়ে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী সড়ক, ১৫ নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রীপাড়া মোড় থেকে বসুননিয়াপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক, ৫ নং ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া এলাকার রেলওয়ে কলোনীর ও ২ নং ওয়ার্ডের রেলওয়ে কলোনীর সড়কগুলোসহ পুরো পৌর এলাকায় বেশকিছু রাস্তায়। 

এলাকাবাসী জানায়, এই সড়কগুলোর সাথে ড্রেন থাকলেও তা পানি নিঃসরণের অনুপযোগী। ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে পড়ায় ও দীর্ঘদিনেও পরিষ্কার না করায়  পানি নির্গমনের ডোবা বা ভাগারগুলোতো যেতে পারছেনা। কোথাও আবার ড্রেনের শেষপ্রান্তে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে স্থাপনা গড়ে ওঠায় পানি অপসারণ হচ্ছেনা। তাছাড়া ডোবা ও ভাগারগুলোও ভরাট হয়েছে। সেগুলোও খনন না করায় পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে উল্টো ডোবার পানিই ড্রেন দিয়ে নিচু এলাকায় গড়িয়ে এসে রাস্তায় উপচে পড়ছে। এতে স্থায়ী পানিবদ্ধতায় আচ্ছন্ন এলাকাগুলো। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এলাকার কাউন্সিলর ও মেয়রসহ সকল জনপ্রতিনিই এব্যাপারে অবগত। কিন্তু তারপরও কেউই ভোগান্তি দূর করতে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছেনা। জনগণের প্রতি যেন তাদের কোন দায়িত্বই নেই। আগে নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করায় দূর্ভোগ কম ছিল। ন্যুনতম হলেও শুকনো মৌসুমে সমস্যা থাকতোনা। বর্ষায় চরম অবস্থা হতো। আর এখন শীতকালেও পানিতে তলিয়ে থাকছে রাস্তা, বাড়ির আঙ্গিনা। বর্তমান পরিষদ কোন কাজই করেনি। তাই এমন দূঃসহ অবস্থায় পড়েছে সৈয়দপুরবাসী। 

হাতিখানা রাজ্জাকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের বাসিন্দা ওয়াসিম আকরাম বলেন, এলাকায় রেলওয়ের জায়গা লিজ নিয়ে গড়ে ওঠা ইকু হেরিটেজ হোটেল এন্ড রিসোর্টের পানি এই ড্রেনে ছাড়ায় সারাবছর রাস্তায় পানি জমে থাকছে। ড্রেনটি ক্যাম্পের ভেতর দিয়ে যে জমিতে গিয়ে পড়েছে তাতে এখন বাড়ি করায় মালিক ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত ওই নোংরা পানি মাড়িয়ে অনেক কষ্টে চলাচল ও বসবাস করছে। কাউন্সিলর ও মেয়রকে জানালেও তারা গায়ে লাগায়নি। 

পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ বলেন, খুবই দুঃখজনক বিষয়। ইকু হেরিটেজের মালিককে বলেছি যেন তারা কিছুদিন এই ছোট ড্রেনে পানি না ফেলে। কিন্তু তারা কর্ণপাত না করায় পানির পরিমান বাড়ছে। এনিয়ে মেয়রের সাথে কথা হয়েছে। সহসাই করোনার ফান্ড দিয়ে রাস্তা ও ড্রেনের কাজ করা হবে। তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। এর আগে আর কিছুই করার নাই। 

একই কথা বলেন, ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, পৌরসভার মাসিক মিটিংয়ে এনিয়ে কথা উঠেছে। তাতে অচিরেই রাস্তা ও ড্রেন সংষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা দিয়েছেন মেয়র। এটা বাস্তবায়নে সময় লাগবে। সে পর্যন্ত তো একটু কষ্ট করতেই হবে। 

ইকু হেরিটেজ হোটেল ও রিসোর্টের মালিক ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শিল্পপতি আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম বলেন, এব্যাপারে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। এখন যেহেতু জানলাম। নিজ উদ্যোগেই ড্রেন পরিষ্কার করাসহ পানি নিষ্কাশন স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।

পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান কে মুঠোফোন জনভোগান্তির বিষয়ে জানালে তিনি চিরাচরিত আচরণে বাইরে আছেন বলে এড়িয়ে যান এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়