শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ►
সরকারের সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অধীনে কর্মসৃজন প্রকল্পের ৪০ দিনের মাটিকাটা কাজের তালিকায় বিভিন্ন জনের নাম দিয়ে টাকা তুলে খাচ্ছেন ইউপি মেম্বার। কাজ না করেই উত্তোলিত টাকার ভাগ পাওয়ায় যাদের নাম দেয়া হয়েছে তারা যেমন খুশি তেমনি কর্তৃপক্ষও নির্বিকার। এভাবে সরকারী অর্থ তসরুপ করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। এতে প্রকৃত দরিদ্র অসহায় মানুষ যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি জনমনে সরকারের দূর্নীতি অনিয়মের নেতিবাচক ধারণা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।
এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নে। জানা যায়, ওই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বকর নিজ গ্রামের তিন ব্যক্তির নাম দিয়েছেন মাটি কাটার তালিকায়। যে তিনজন কোনদিনও কাজ করেন না। এই তিনজনের মধ্যে জহুরুল অটোচালক। আশরাফুল থাকে চট্টগ্রামে, আর আব্দুল করিম ঢাকায়।
অটোচালক জহুরুল বলেন, মাটিকাটা কাজের শুরু থেকেই নিয়মিত আমার মোবাইলে টাকা আসলে মেম্বার আবু বকর আমাকে ডেকে টাকা তুলে নিয়ে যায়। আমি অটো চালাই তাই ওই কাজ ও টাকার আমার কোন প্রয়োজন নাই। সেজন্য বার বার টাকা তুলে মেম্বার কে দিয়ে আসছি।
তিনি জানান, এইবার টাকা আসার পরও মেম্বার যোগাযোগ করেনি। শুনেছি এলাকার সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মেরিনা ও তার স্বামী ফজলার রহমানও নিজ মেয়েসহ তিনজনের নামে টাকা তুলে খাচ্ছেন। এনিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় এবং সাংবাদিকরা আমার ব্যাপারে খোঁজ নেয়ায় তিনি ভয় পেয়ে নিরব। তাই নিজেই টাকা তুলে তাঁকে দিয়ে এসেছি। ১২ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে ৩ হাজার টাকা আমাকে দিয়েছে। জহুরুল আরও বলেন, কখনই কোন অফিসার বা চেয়ারম্যান এনিয়ে কিছু বলেনি। হয়তো মেম্বার তাদেরকে ম্যানেজ করে এভাবে টাকা নেয়ার ব্যবস্থা করেছে। নয়তো সম্ভব হতনা।
জহুরুলের মত আশরাফুল ও আব্দুল করিমের টাকাও একইভাবে নিচ্ছেন মেম্বার। ফাও ফাও কিছু টাকা পাওয়ায় তারাও মেম্বার কে সহযোগীতা করছে। এমনকি দূরে থেকেই মেম্বারের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। মেম্বার ইউনিয়ন বিএনপি'র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে উপজেলা কমিটির সদস্য। তার ছেলেও যুবদল নেতা। জেলা আওয়ামীলীগের এক বড় নেতা মেম শ্যালক হওয়ায় সেই দাপটে অনেকটা বেপরোয়া হয়েই এমন নানা দূর্নীতি করে চলেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিমত। এমনকি তারা বাবা ছেলে চেয়ারম্যাননকেও মানেন না।
মেম্বার আবু বকরের সাথে কথা বললে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যাদের কথা বলছেন তাদের মোবাইলেই টাকা গেছে। তারা কাজ না করলে মোবাইলে টাকা গেল কেমনে? এসব তো সর্দার এবং পিআইও'র দায়িত্ব। আমাকে বলছেন কেন? আর সুবিধাভোগীরা যে আমাকে টাকা দিচ্ছে তার প্রমান কি? এসময় জহুরুলের ভাষ্যের ভিডিও ফুটেজ দেখালে মেম্বার বলেন, জহুরুল মিথ্যে বলেছে।
মেম্বারের বিষয়ে ইতোপূর্বেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাশেদুল ইসলামকে জানানোর পরও কেন উল্লেখিতদের বিল দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে তদন্ত করার আগেই বিল প্রসেসিং সম্পন্ন হয়েছে। তাই বিষয়টা এমন হয়েছে। আগামীতে সঠিকভাবে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে নাম বাতিল করা হবে। অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।