• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৪-৪-২০২৪, সময়ঃ রাত ০৮:১০
  • ৩৮ বার দেখা হয়েছে

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও খোঁজ মেলেনি গাইবান্ধার ১২ জনের

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও খোঁজ মেলেনি গাইবান্ধার ১২ জনের

তাজুল ইসলাম রেজা, গাইবান্ধা

রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় গাইবান্ধার নিখোঁজ ১২ জনের কোনো সন্ধান ১১ বছর পরেও পাওয়া যায়নি। এই নিখোঁজদের রোজকারে চলতো অনেকের পরিবার। তাই রানা প্লাজা ধসে তাদেরকে হারিয়ে এসব পরিবারের সদস্যরা এখন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

নিখোঁজদের স্বজনরা রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ অভিযুক্ত সকলের দ্রুত বিচার দাবি করে জানান, ঘটনার পর সরকারের অনেক প্রতিশ্রুতি তারা শুনেছেন। কিন্তু কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হতাহত পরিবারদের কোন সদস্যকে চাকরিও দেওয়া হয় নাই। তাদেরকে শুধু নামমাত্র আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই ভবন ধসে গাইবান্ধার ৪৯ জন নিহত ও ১২ জন নিখোঁজ হন। আহত হন আরও অনেকে। সে সময় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। 

সূত্রটি আরও জানায়, ভবন ধসের ওই ঘটনায় জেলার নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় তিনজন, পলাশবাড়ী উপজেলায় তিনজন, সাদুল্লাপুর উপজেলায় পাঁচজন ও সাঘাটা উপজেলায় একজন। এখনো তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি।

নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ বুড়ির খামার গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে হালিমা খাতুন (রেশমা), ধাকুরাকুটি গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে রিনা বেগম, বোয়ালি ইউনিয়নের মধ্য ফলিয়া গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের মেয়ে মুক্তা বেগম, পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে শ্যামলী খাতুন, একই গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম ওরফে জলিল ব্যাপারীর মেয়ে নুরুন্নাহার আক্তার শিল্পী ও সাতারপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বাটুর ছেলে জিল্লুর রহমান ওরফে রাফিউল, সাদুল্লাপুর উপজেলার দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের আব্দুল বারী আকন্দের মেয়ে বিথী খাতুন, দামোদরপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের স্ত্রী বুলবুলি বেগম, পূর্ব দামোদরপুর গ্রামের আনিছুর রহমানের মেয়ে রাশেদা বেগম, উত্তর দামোদরপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী নুরবানু আক্তার আশা ও কিশামত দশলিয়া গ্রামের সোনা মিয়ার স্ত্রী কামনা বেগম এবং সাঘাটা উপজেলার ধোপারভিটা গ্রামের মুছা মিয়ার স্ত্রী বিলকিস বেগম।

নিখোঁজদের পরিবারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিখোঁজ শ্রমিকদের টাকায় চলতো অনেকের পরিবার। রানা প্লাজা ধসে তাদেরকে হারিয়ে সেসব পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

নিখোঁজ কামনা বেগমের শ্বাশুড়ী মোছা: মোরশেদা বেগম জানান, তারা দুইজনেই রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি ৪ তলায় আর ছেলে বউ  ৬ তলায় কাজ করতেন। ভবন ধসে ছেলে বউ নিখোঁজ হয়। তিনি আহত হন। 

তিনি আরও জানান, প্রায় ৮ ঘন্টা পর তাকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু ছেলে বউয়ের খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি। কামনা বেগমের রেখে যাওয়া ৪ বছর বয়সী সন্তান কামরুল এখন ১৫ বছরের কিশোর। কামরুল তার কাছে থাকেন। স্থানীয় একটি হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণীতে পরে। 

তিনি বলেন, “আল্লাহ যদি বউ মা কামনা বেগমকে না নিয়ে, আমাকে নিয়ে যেত। তাহলে কামরুলকে এমন অবহেলা আর অনাদরে বড় হতে হত না।” 

তিনি আরও বলেন, এসময় আমার বাম পাঁ ভেঙ্গে যায়। আজও আমি ভালোভাবে হাঁটতে পারি না। আমার স¦ামীও অসুস্থ। তাই এখন একমাত্র ছেলে সোনা মিয়ার দিনমজুরীর আয় দিয়ে ৭ সদস্যের সংসার আর চলে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই তাকে পর্যায়ক্রমে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। যা চিকিৎসা ব্যয়ে শেষ হয়ে যায়।

কামনা বেগমের ছেলে কামরুল ইসলাম এই ঘটনায় দোষীদের দ্রুত বিচার দাবি করে জানায়, যাতে আর কাউকে আমার মত “মা” হারা না হতে হয়। 

বিথী খাতুনের বাবা আব্দুল বারী বলেন, দুই বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে বিথী সবার বড়। সংসারে অভাবের কারণে দুই মেয়ে রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত। ভবন ধসে বড় মেয়ে নিখোঁজ হয়। এখনো তার কোনো সন্ধান পেলাম না।

তিনি রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ভবন মালিক সোহেল রানাসহ অভিযুক্ত সকলের দ্রুত বিচার দাবি করে আরও জানান, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার পরিবারের কোন সদস্যকে চাকরিও দেওয়া হয় নাই। তাদেরকে শুধু নামমাত্র আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। 

হালিমা খাতুন রেশমার বাবা রমজান আলী বলেন, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রেশমা। আমার বয়স ৬৫বছর পেরিয়ে গেছে। কাজ করতে পারি না। মেয়েটার টাকায় সংসার চলত। রানা প্লাজা ধসের দুইমাস আগে মেয়েটি ওখানকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। সে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। মেয়েটা নেই। খুব কষ্টে দিন কাটছে। 

এই পরিবারগুলোর মতো অবস্থা হালিমা খাতুন ও বিলকিছ বেগমের পরিবারেও।

গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া বলেন, রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতের পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এরপর তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়ে তেমন কোনো সরকারি নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়