ভবতোষ রায় মনা ►
চর-অধ্যূষিত গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৫টি গ্রামে স্থাপিত ১৫টি কমিউনিটি ফুড ব্যাংকে মুষ্টির চাল জমিয়ে দুর্দিন কাটিয়ে উঠছেন অজপাড়াগাঁয়ের ৬২৪ নারী। প্রতিদিন তিনবেলা ভাত রান্নার জন্য হাঁড়িতে চাল ভেজানোর আগে সেখান থেকে মাটির পাতিলে এক মুষ্টি চাল সরিয়ে রাখেন তারা। ৩০ দিনের জমানো চাল বিক্রি করা হয় একসঙ্গে।
বর্তমানে ১৫টি ফুড ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ টাকা। আর চালের পরিমাণ ২৪ হাজার ৪শ ৪৬ কেজি। বন্যা, কর্মহীন সময় ছাড়াও অন্যান্য দুর্দিনে এই ফুড ব্যাংক থেকে চাল বা নগদ অর্থ ধার-সহায়তা নিয়ে নিজেদের প্রয়োজন নিজেরাই মেটাচ্ছেন ফুড ব্যাংকের সদস্যরা।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার পিপুলিয়া চর গ্রামের গ্রামের ৩১ নারীকে চৈত্র-কার্তিকের, কিংবা বন্যা, খরায় অথবা অন্যকোন দুর্দিনে এখন কারও কাছে হাত পাততে হয় না। ফুড ব্যাংকের সদস্য জরিনা বেগম বলেন, ২০১৮ সাল থিকি ভাত রান্না করার আগোত হামরা একমুট করি চাল ওই ফুড ব্যাংকোত জমা রাখা শুরু করি। এ গ্রামের ৫১জন গৃহবধূ এ ফুড ব্যাংকে চাল রাখছে। বাজে ফুলছড়ি গ্রামের আজিরন বেগম বলেন, হাঁস পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা ও সবজি চাষের পাশাপাশি প্রতিদিন তিনবেলা হাঁড়িতে ভাত রান্নার আগে মাটির পাতিলে মুষ্টির চাল জমিয়ে রাখলে তা দুর্দিনে কাজে দেয়।
সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দী দণিপাড়া ফুড ব্যাংকের সভাপতি শেফালী বেগম জানান, এ ফুড ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ৩০ জন। আমরা নিজেদের প্রয়োজনেই এ ফুড ব্যাংক স্থাপন করেছি। দুর্দিনে ফুড ব্যাংক থেকে সহায়তা পাওয়ায় অন্যের নিকট হাত পাততে হয় না। কড়াসুদে টাকাও নিতে হয় না। আমরা প্রতিদিন ভাত রান্নার চাল থেকে একমুষ্ঠি চাল আলাদা করে তুলে রেখে মাস শেষে ফুড ব্যাংকে জমা করছি। পরবর্তী মাসে চাল না আসা পর্যন্ত চাল ফুড ব্যাংকে জমা রাখা হয়। নতুন চাল আসার পর আগের চাল বিক্রি করে বিক্রির টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়। ফুড ব্যাংকের সদস্য ধুলজান জানান, বিপদের সময় নিজেদের প্রয়োজনে টাকা বা চাল নিয়ে কাজ সেরে আবার নির্দিষ্ট সময়ে ফুড ব্যাংকে ফেরত দেওয়া হয়।
ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজাহারুল হান্নান ফুড ব্যাংকের কার্যক্রম সর্ম্পকে বলেন, বেসরকারি একটি এনজিও এ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ফুড ব্যাংক স্থাপন করে দিয়েছে। প্রতিটি ফুড ব্যাংকের সম্পর্কিত নারীদেও প্রশিক্ষলণর মাধ্যমে এসব কাজে উৎসাহ জুগিয়েছে। এসব নারীরা সম্মিলিতভাবে দুর্দিন ঘোচানোর জন্য যে পন্থা অবলম্বন করেছেন তা অনুকরণীয়।
সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট বলেন, ফুড ব্যাংকে মুষ্টির চাল সংগ্রহের জন্য রেজিষ্ট্রার খাতা রয়েছে। প্রত্যক সদস্যের নাম সেই খাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ কারণে গোবিন্দী দণিপাড়া গ্রামের নারীদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে উঠেছে, অন্যদিকে সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হচ্ছে।
এসকেএস ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী প্রধান রাসেল আহম্মেদ লিটন বলেন, স্থানীয় নারীদের দক্ষতা ও সমতা উন্নয়নের জন্য ২০১৮ সালে এ ফুড ব্যাংক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। অক্সফ্যামের সহায়তায় এসিটি প্রকল্পের মাধ্যমে এসকেএস ফাউণ্ডেশন এটি বাস্তবায়ন করেছেন। তারা এখন এর সুফল ভোগ করছেন।
ফুড ব্যাংকের কার্যক্রম দেখতে সম্প্রতি চরগোবিন্দী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ‘ফুড ব্যাংক’ পরিদর্শন করেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার, এনডিসি। পরিদর্শনকালে ড. নমিতা হালদার, এনডিসি বলেন, “নিজেরা নিজেদেরকে সহায়তা করার এটি একটি অভিনব পন্থা। এটি টেকসই উন্নয়নের একটি বড় সূচক।” এই নতুন উদ্যোগের জন্য তিনি ফুড ব্যাংকের সদস্যদের সাধুবাদ জানান।