Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৯-১-২০২৪, সময়ঃ বিকাল ০৫:২৬

ভরা মৌসুমেও সৈয়দপুরে সবজির বাজার চড়া

ভরা মৌসুমেও সৈয়দপুরে সবজির বাজার চড়া

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর

অন্যান্য বছর শীতকালে সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম থাকলেও এবার এর চিত্র পুরোটাই উল্টো। শীতের ভরা মৌসুমেও সবজির বাজার অনেক চড়া। বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়তি নয়। 

এদিকে, ভরা মৌসুমে সবজির পাশাপাশি সব ধরনের মাছ, মাংস, মুরগির দামও অনেক বেশি। এছাড়া, সরকার গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও মানছেনা কেউ। ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বর্তমানে ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন দোকানিরা। 

কেনা দূরের কথা দাম শুনেই প্রবল শীতেও যেন ঘাম ঝরছে ক্রেতার। নিত্যপণ্য ও তরি তরকারি কিনতেই পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। বাজারে সবকিছুর এমন চড়া দামে ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি, মৌসুমের শুরুতে আকস্মিক বৃষ্টিতে অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া, কয়েকদিনের অতিরিক্ত শীতে কৃষক ফসল তুলতে পারেনি, ফলে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে সবজির দাম। 

আজ শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সৈয়দপুর শহরের  বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চড়া দামের চিত্র। আজকের বাজারে প্রতি কেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায় আর বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। এছাড়া, বেগুন প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৪০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, ঝিঙা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকি প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিম ৬০ থেকে ৮০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকা ও ব্রুকলি প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে কমে যায় গরুর মাংসের দাম। সেই সময় দাম কমে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয় ৬০০ টাকায়। পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে, বাজারে সরকারের এ নির্দেশনা মানার কোনো বালাই নেই। বর্তমানে দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৬০  থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। 

এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়। সেই সাথে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কক ও লেয়ার ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, গত কিছু দিন ধরেই বাড়তি যাচ্ছে সব ধরনের মাছের দাম। আজকের বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বাটা মাছ ২০০ টাকা কেজি। 

রুই মাছ প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছোট টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও শোল মাছ প্রতি কেজি ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শীতের ভরা মৌসুমে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সৈয়দপুর পৌর সবজি বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আনিস উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছর শীতের সময় সব ধরনের সবজির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি থাকে। তবে এ বছর ভরা মৌসুমে সব ধরনের সবজি কিনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। 

অন্যান্য বছরের এ সময়ে শিমের কেজি থাকে ৩০ টাকা। অথচ এবার আমাদের কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকায়। বেগুন গত সপ্তাহে কিনেছি ৬০ টাকায়, আজ কিনতে হলো ৮০ টাকায়। সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করে ভরা মৌসুমেও অতিরিক্ত দাম নেয়া হচ্ছে। এতে করে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের এবং সাধারণ ক্রেতারা। 

একই রকম অভিযোগ করেন রেলওয়ে কারখানা গেট বাজারের নিয়মিত ক্রেতা আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, বাজারে সব সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি। এর সঙ্গে সব ধরনের মাছের দাম এতই বেড়েছে যে, কেনার কোনো উপায় থাকে না। নানান অজুহাতে সবসময়ই বাড়তি যাচ্ছে মাছের বাজার। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, শীতের সময় সবজির দাম থাকবে সবচেয়ে কম, অথচ এই সময় এসে সব ধরনের সবজির দাম সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। 

ভরা মৌসুমেও কেন সবজির দাম এত বেশি? এ বিষয়ে একই গোলাহাটের সবজি বিক্রেতা আজগার হোসেন বলেন, মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই হঠাৎ আকস্মিক বৃষ্টিতে ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। এছাড়া, কয়েকদিনের তীব্র শীতের কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে ফসল তুলতে পারেনি। যে কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। 

তাছাড়া সৈয়দপুর নীলফামারীসহ এই এলাকার সবজি সরাসরি চলে যাচ্ছে ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায়। বাইরের ব্যবসায়ীরা কৃষকের ক্ষেত থেকেই আলুসহ সব ধরনের সবজি ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে পাইকারি বাজারেই বেশি দামে সব জিনিস বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে সেজন্য দাম চড়া। 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad