সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর ►
মোহাম্মদ আজিম (৪৮)। পেশায় একজন ছাতা মেরামত কারী। বাবার রেখে যাওয়া পেশাটাকে ধরে রাখার জন্যই এখনো ছাতা মেরামত কারীর কাজটি করে যাচ্ছেন।
সারাদিন ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা আয় হলেও স্ত্রী, এক সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কেটে যায় তার। একমাত্র ছেলে দিনাজপুরের বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। ছেলেকে এই পেশায় জড়াবেন না। ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন একটি ছোটখাটো সরকারি চাকরি করবে এমন স্বপ্ন ছাতা মেরামত কারী আজিমের।
দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়া সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার প্রধান ফটকের পাশেই ছোট্ট একটি তাঁবু টানিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ছাতা মেরামতের ব্যবসা করে আসছেন মোহাম্মদ আজিম।
মোহাম্মদ আজিম দিনাজপুর শহরের ঢাকাইয়া পট্টির সাজিমুদ্দিনের ছেলে। বাবা সাজিমুদ্দিন ২০১৮ সালে বার্ধক্য জনিত মৃত্যুর পর তার এই ব্যবসাটাকে পরিচালনা করেন মোহাম্মদ আজিম।
বাবার রেখে যাওয়া ছাতা মেরামতের ব্যবসাটিকে আদর্শ পেশা হিসেবেই মনেপ্রাণী গ্রহণ করেন আজিমুদ্দিন। বাবা বলে গিয়েছিলেন তার অবর্তমানে ছাতা মেরামতের ব্যবসাটা যিনি তিনি চালিয়ে যান। তাই বাবার এই কথা রাখার জন্যই যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এই ছাতা মেরামতের ব্যবসাটি চালিয়ে যাবেন আজিম।
আজিমুদ্দিনের পাঁচ ভাই, চার বোন অন্যান্য ভাইয়েরা বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসা-বাণিজ্য করলেও সবার ছোট ভাইটি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একটি কর্পোরেট কোম্পানিতে চাকুরি করেন। ভাইদের মধ্যে চতুর্থ হলেও আজিম বাবার সাথে ছোটবেলা থেকেই এই ছাতা মেরামতের ব্যবসায় বসতেন। তিনি এখন দক্ষ ছাতা মেরামতকারী হিসেবে দিনাজপুর শহরের আত্মপ্রকাশ করেছেন বলে তিনি জানান।
মোহাম্মদ আজিম বলেন, বর্ষাকালে ছাতা মেরামতের কাজ বেশি হয়। তবে এ বছর তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ছাতা মেরামত করতে তেমন লোক যেন আসে না। একসময় দিনরাত পরিশ্রম করে ছাতা মেরামতের কাজ হত। এখন মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কারণে দুই থেকে তিনশ টাকার মধ্যেই ছাতা পাওয়া যায়। তাই কোন একটি ছাতা নষ্ট হলে বা হাতল ভেঙ্গে গেলে বা গুনা ছিড়ে গেলে কেউ কেমন ভাবে মেরামত করতে আসে না। আবার নতুন করে ছাতা কিনে নেয়।
তিনি জানায়,বর্ষাকালে ছাতা মেরামতের কাজ একটু বেশি থাকে। তবে শীতকালে একেবারেই ছাতা মেরামত করতে কেউ আসে না। সেই সময় অর্থাৎ চারটি মাস ছাতা মেরামত কাজ থাকেনা। তখন অন্য কোন পেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলি।
তিনি আরো জানান , এই ছাতা মেরামতের কাজটি করে নিজস্ব একটি বাড়ি করেছি। সেই বাড়িতেই পরিবার পরিজন নিয়ে প্রশান্তিতে ঘুমাতে পারি। কারণ সৎ পথে অল্প আয়-রোজগার হলেও অন্য কোন চিন্তা নেই। তাই অনেক ভালো আছি ।
দিনাজপুরের মুন্সি পাড়ার সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার প্রধান ফটকের সামনে বাবা সাজিমুদ্দিন ১৯৪০ সাল থেকে ছাতা মেরামতের কাজটি শুরু করেছিলেন । বাবার সাথে একসময় ছাতা মেরামতের কাজ যুক্ত হয়ে পড়ি। একই জায়গায় ৮০ বছর ধরে ছাতা মেরামতের কাজটি আমার বাবা করেছিল এখন আমি করছি।
তিনি বলেন দিনাজপুর সহ আশপাশের অনেক লোকেরাই ছাতা মেরামত করার জন্য মুন্সিপাড়া সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ফটকের সামনেই ছাতা মেরামত করিয়ে নিয়ে যান। অন্য কারো যদি ছাতার সমস্যা হয় বা মেরামত করতে চায় তাদেরকেও অনেক সেবা প্রত্যাশী ব্যক্তিরা আমার ঠিকানা দিয়ে থাকেন। যত্ন সহকারে ছাতা মেরামতের কাজটি করে দেই বলেই শহর জুড়ে আমার একটি সুনাম রয়েছে।
যখন বৃষ্টি আসে তখন আমাদের ভালো ব্যবসা হয়। কারণ ছাতা তো সারা বছর ব্যবহার করতে হয় না। যখন বৃষ্টি বেশি হয় তখনই ছাতার প্রয়োজন হয়। চলতে পথে যদি কারো ছাতার সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে আমার দোকানের সামনে এসে তাৎক্ষণিকভাবে ছাতা মেরামত করে চলে যায়। বর্ষাকালে ছাতার মেরামতের কাজের চাপ অনেক বেশি হয় ফলে সেই সময় প্রতিদিন আমাদের আয় রোজগারও একটি বেড়ে যায়।