Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৫-২-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৪:৩৬

বীরগঞ্জের ঢেপা নদীর খননকৃত বালু অবৈধভাবে বালু বিক্রয় চলছে দেদারছে

বীরগঞ্জের ঢেপা নদীর খননকৃত বালু অবৈধভাবে বালু বিক্রয় চলছে দেদারছে

দিনাজপুর প্রতিনিধি ►

দিনাজপুর বীরগঞ্জের ঢেপা নদীর খননকৃত বালু  নিজেকে স্বঘোষিত ইউপি চেয়ারম্যান দাবি করে ক্ষমতাসীন দলের ছত্র ছায়ায় অবৈধভাবে বালু বিক্রয় চলছে দেদারছে তোফাজ্জল হোসেন রাজা । গ্রামবাসীর কয়েক দফা অভিযোগ করেই কোন ব্যব্স্থা গ্রহন করেনি প্রশাসন ।  গ্রামবাসীর অভিযোগ পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন তোফাজ্জল হোসেনের অবৈধভাবে বালু বিক্রয়ের বিষয়টি কি কারনে যেন এড়িয়ে যায় । 

উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ঢেপা নদীর কুড়িটাকিয়া অংশ হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীর তীরের রাস্তা , কাচা পাকা রাস্তা ,এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ নষ্ট করে বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছে জনপ্রতিনিধি না হয়েও নিজেকে ইউপি চেয়ারম্যান দাবি করা  তোফাজ্জল হোসেন রাজা। নদীর ঘাট থেকে অবৈধভাবে শত শত ১০ চাকার ডাম্প ট্রাকে করে বালু ভর্তি করে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রেখেই বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে হচ্ছে। এই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রয় করায় স্থানীয়রা পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনকারী তোফাজ্জল হোসেন রাজা আওয়ামী লীগ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান পদে নৌকা নিয়ে দুইবার নির্বাচন করলেও তার বিতর্কিত ও কর্মকান্ডে এলাকার মানুষ তাকে ভোট না দিলেও তিনি নিজেকে জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়েই এই অবৈধ বালু  উত্তোলন করছে। সংবাদকর্মীরা এই অবৈধ বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য কুড়ীটাকিয়া এলাকায় ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য গেলে তাদের সাথে উর্ধ্বত্বপূর্ণ আচরণ করে তোফাজ্জল হোসেন রাজা ও তার ছেলে রকি।

দিনাজপুর  পানি উন্নয়ন র্বোড কর্তৃক দিনাজপুর হতে বীরগঞ্জ পর্যন্ত ঢেপা নদীটি দীর্ঘদিন ধরে খনন কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খনন বালু অবৈধ ভাবে ঢেপা নদীর মাঝামাঝিতে বাধ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ কওে দিয়েছে । সেই  নদীর বাধ দেওয়া বালুর রাস্তা দিয়ে ১০ চাকার ড্রাম্প ট্রাক ভর্তি  প্রতিদিন বালু উত্তোলন করে রাতের আধারে বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা আদায় করছে। নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাঠে লোক দেখানো কিছু বালু রেখে ভুল বুঝাচ্ছে মানুষকে। অবৈধ ভাবে বালু বিক্রির ফলে ঢেপা নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ জমি নদীর ভূগর্ভে পতিত হওয়ার আশঙ্কা করছে চাষিরা। 

কয়েক বছর আগে নদীর তীরবর্তী এলাকায় সরকার একটি বাঁধ নির্মাণ করলেও অবৈধভাবে উত্তোলনের বালু ঐ বাধের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে ধংসের পথে। বালু বহনকারী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিবাদ করার কেউ সাহস পায়নি। ট্রাকগুলো বালু বহন করার ফলে রাস্তার গুলো ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এমনকি বালুভর্তি ট্রাক কুড়িটাকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের মাঝখান দিয়ে বালুর ট্রাক পরিবহন করায় খেলার মাঠও নষ্ট হয়ে গিয়াছে এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল চলাকালীন সয়ে মাঠের উপর দিয়ে বালুুবাহি ড্রাম্প ট্রাক চলাচল করার কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে ছাত্র-ছাত্রীরা। 

বালুদস্যু তোফাজ্জল হোসেন রাজার ভাই নিজেই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি  থাকায় কোন শিক্ষক ও  ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। 
পাল্টাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সকল জনপ্রতিনিধিরা  ঢোপা নদীতে থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রতিবাদে রেজুলেশন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করলেও এই অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজটি বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত দুই মাস ধরেই এই বালু খেকর  তোফাজ্জল হোসেন রাজা বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ প্রতিবাদ করলেও উল্টো তাদেরকে মারধর ও বিভিন্ন মামলা হামলার ভয় দেখিয়েছে তোফাজ্জল হোসেন রাজা নিজের ফায়দা হাসিল করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বালু অবৈধ ভাবে উত্তোলন করে বিক্রির প্রতিবাদে স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাবে পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের বিষয়টি অবগত করলেও পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নানাভাবে এড়িয়ে গিয়াছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা।

ঢেপা নদীর তীরবর্তী ফসল ফলনকারী চাষী মাসুদ রানা জানায়, নদীর তীরবর্তী তার ৫ বিঘা জমি ছিল। জমির ঠিক নিচ থেকেই গভীরভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে আগামী বন্যার মৌসুমী তার জমির বেশিরভাগ জমি নদীতে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। এ বিষয়ে একবার প্রতিবাদ করেলে তোফাজ্জল হোসেন রাজা ও তার ছেলে রকির হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকি এক কলেজ ছাত্রী বলেন, তাদের এই ঢেপা নদীর পাড়েই তাদের কিছু জমি রয়েছে। এই বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ার কারণে নদীর অংশে তাদের কিছু জমি বিলিন হয়ে গেছে । আগামী বন্যায় আরোও জমি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছে। নিজ বাড়ীতে তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টি একাধিকবার স্থানীয়রা প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করলেও কোন সুরাহা পাওয়া যায় নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্যে দুলাল রায় জানায়, রাতের আধারে ডাম্প ট্রাকে করে বালু বিক্রির প্রতিবাদ করায় তোফাজ্জল হোসেন রাজার বাহিনীর হাতে লাঞ্চিত হতে হয়েছে। তারা আমাকে ও আমার স্ত্রী ও আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে ধরেও মারপিট করে। থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনী।  

 কুড়িটাকিয়া গ্রামের  কামরুল হাসান বলেন, আমাদের বাড়ীর পাশ দিয়েই দশ চাকা ডাম্প ট্রাকে করে বালু পরিবহন করার কারণে রাস্তা দিয়ে চলাচল একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ট্রাকের ধুলায় রাস্তার পাশে বাড়ী ঘর গুলো বেশি ভাগ বালু দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে  বারবার অভিযোগ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

কুড়ীটাকিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী নাসরিন আক্তার বলে, স্কুল চলাকালীন সময়ে আমাদের স্কুলের মাঠ দিয়ে বালু ভর্তি করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার কারণে আমরা ভয়ে ভয়ে থাকি। যে কোন মুহূর্তে আমাদের কারো দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা একাধিকবার বিষয়টি অবগত করলেও কিছু সময় দিনের বেলা বালু বাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকলেও রাতের বেলায় আমাদের স্কুলের মাঠ দিয়েই শত শত বালুবাহী ট্রাক নিয়ে যায়। এতে করে আমাদের বিদ্যালয়ের মাঠ একেবারেই চলাচলের অনুপুযোগী হয়ে পড়ে। খেলাধুলা বা চলাচলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়।

অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগের বিষয়ে তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁদের কাছে সাবকন্ট্রাক্ট নিয়ে খননকাজ করছি। তাঁদের অনুমতি সাপেক্ষে খননকৃত বালু বিক্রি করা হচ্ছে। নদীর মাঝখানে রাস্তা তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, ওই রাস্তার মধ্যে কালভার্টের মতো করা হয়েছে। পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হয়নি।  

পাউবোর দিনাজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘নিলাম ব্যতীত খননকাজের বালু বিক্রির সুযোগ নেই। চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাউবোর অনুমতি ব্যতীত কাউকে সাবকন্ট্রাক্টও দিতে পারবেন না। তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি নদীর বালু তুলে বিক্রি করছেন বিষয়টি শুনেছি। ইউএনওকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ পাউবো কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত আছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি তা হয়ে থাকে, তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad