Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৮-৩-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৫:৩০

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার পলো উৎসব

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার পলো উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক ►

গ্রাম বাংলার জনপদে নানাভাবে মাছ ধরার পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। পলো দিয়ে মাছ ধরা এরমধ্যে অন্যতম। যা আবহমান গ্রাম বাংলার দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশও বটে। তবে কালের বিবর্তনে দেশি মাছ এবং মাছ ধরার সংস্কৃতি দুটোই এখন বিলুপ্তির পথে।

গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রীজ এলাকায় শুরু হয়েছে এমনই এক পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব। সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকেই ঘাঘট নদীর নতুন ব্রীজ অভিমুখে জড়ো হতে থাকে নানা শ্রেণী পেশার বিভিন্ন বয়সী মানুষ। জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা এসব মানুষের কারও হাতে পলো, আবার কারও হাতে ঠেলা জাল, খুইরা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। শতশত মানুষের হৈ হুল্লোড়ে নদী পাড়ে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।

মাছ ধরতে এসে দেখা হয় বিভিন্ন গ্রামের মানুষের সঙ্গে। চলে একে-অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় আর হাসি-ঠাট্টা। আর এভাবেই চলে আসছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব পলো দিয়ে মাছ শিকার। মাছ ধরার সময় সবার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। কারো পলোতে বোয়াল ধরা পড়ে, আবার কারো জালে আঁইড়। মাছ ধরা পড়তেই চিৎকারে মুখোরিত হয়ে ওঠে চারপাশের পরিবেশ। এ যেন হারিয়ে যাওয়া এক মিলনমেলা।

প্রতিবছর শীত মওসুমে নদী-নালা, খাল, বিল ও পুকুরে পানি কমতে শুরু করলে গ্রামের সবাই সমবেত হয়ে মাছ শিকারের তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করেন। সে অনুযায়ী মাছ ধরার খবর  দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। নির্ধারিত দিনে শতশত লোক পলো, বিভিন্ন প্রকারের জাল, দঁড়িসহ মাছ শিকারের নানাবিধ উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে হাজির হন সেই নির্ধারিত স্থানে। মাছ শিকারের দিন আশপাশের গ্রামগুলোতেও বিরাজ করে উৎসবমূখর পরিবেশ।

মাছ ধরার এই উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন  পলাশবাড়ী উপজেলার প্রফুল্ল চন্দ্র। তিনি বলেন, 'প্রতিবছর আমরা এই পলো দিয়ে মাছ ধরতে বিভিন্ন জায়গায় যাই। এখানে মাছ ধরার চেয়ে আনন্দের পরিমাণ অনেক বেশি। বর্তমানে মাছের পরিমাণ অনেক কম'।

সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফজলার মিয়া জানান, 'আগে নদী এবং বিল গুলোতে ১০ থেকে ১৫ কেজির বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। এখন নদীতে তেমন আর মাছ পাওয়া যায়না। মাছ ধরার এই উৎসবে এসে অনেকের সাথে দেখা হয়, আনন্দ হয়। এটাই বড় পাওয়া। এখনো মাছ পাওয়া যায়, তবে আগের মত আকারে বড় নয়'।

প্রাচীন মাছধরা উৎসবের অন্যতম নান্দনিক পদ্ধতি হলো পলো বা বাওয়া। বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঝাঁপিকেই বলা হয় পলো। শুষ্ক মৌসুম এলেই শৌখিন মাছ শিকারিরা পলো নিয়ে নদী নালা ও বিলের পানিতে দলবেঁধে নেমে পড়তেন। উৎসবমুখর পরিবেশে তারা শিকার করতেন ছোট বড় নানা প্রজাতির মাছ। প্রতি বছর আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে এই পলো উৎসব। মাছ শিকারের জন্য পলোর ব্যবহার হয়ে আসছে বহু কাল আগে থেকে। বাঁশের তৈরি এই পলো মাছ শিকারসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন কৃষকরা।

তবে দখল, দুষণ ও ভরাটসহ নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই পলো উৎসব। তাছাড়া মাছের চলাচলের ব্যবস্থা না রেখেই তৈরি করা হয় অপরিকল্পিত বাঁধ, রাস্তাঘাট। এসব কারণে মাছের প্রাকৃতিক আবাসন ধ্বংস হছে। আবার জলাশয়ে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষ করায় মাছের প্রাকৃতিকভাবে বিচরণের জলাশয়কে কোণঠাসা করেছে।

অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে দেশীয় মাছের উৎপাদন ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে এবং দেশি মাছের প্রজাতি দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানান জেলা মৎস কর্মকর্তা ফয়সাল আজম। তিনি বলেন, 'বর্তমানে নদী-নালা, খাল-বিলের সংকোচন, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, ইত্যাদি কারণে দেশি প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই প্রাচীণ ঐতিহ্যের পলো দিয়ে মাছ শিকার এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। তবে আমরা দেশি প্রজাতির মাছ এবং তাদের বংশবৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি'। 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad