Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২৫-১-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:১৮

বাইশ বছর ধরে বন্ধ ৫ রেল স্টেশন খোয়া যাচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ

বাইশ বছর ধরে বন্ধ ৫ রেল স্টেশন খোয়া যাচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ

ভবতোষ রায় মনা ►

তিস্তামুখ-বালাসীঘাট রুটে প্রায় ২২ বছর ধরে বন্ধ রেলওয়ে ফেরি ও ট্রেন সার্ভিস। সে কারণে তিস্তামুখ রেলওয়ে স্টেশন, ভরতখালী স্টেশন, বালাসীঘাট রেলওয়ে স্টেশন, কঞ্চিপাড়া স্টেশন ও আনন্দবাজার রেল স্টেশনটি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপ। তিস্তামুখঘাট, ভরতখালী স্টেশন ও বালাসী-ত্রিমোহিনী রেলপথটি বছরের পর বছর অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকায় রেলের জমি দখল, কাঠের স্লিপার, রেলপাত, নান্টুবোল্ট এবং মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়াসহ নষ্ট হচ্ছে রেলের সম্পদ।

রেলওয়ে সুত্র জানায়, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগের জন্য গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদঘাট দিয়ে যমুনা নদীতে রেল ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। তৎকালীন রেলওয়ে কর্তৃপ ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর জেলার গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগর ও ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যাত্রী ও মালামাল পারাপারের জন্য যোগাযোগ গড়ে তুলতেই এ ফেরি সার্ভিসটি চালু করা হয়।

  ১৯৯০ সালে যমুনা নদীর নাব্য সংকটে ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখঘাট থেকে একই উপজেলার কঞ্চিপাড়ার বালাসীঘাটে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানান্তর করা হয়। ত্রিমোহিনী স্টেশন থেকে বালাসী পর্যন্ত নতুন করে রেলপথ নির্মাণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে দিনাজপুর থেকে রংপুর হয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট পর্যন্ত ট্রেনে যাতায়াত করত এতদাঞ্চলের মানুষ। 

২০০০ সাল নাগাদ রেলওয়ে ফেরি সার্ভিসের জন্য যে ৩৪টি নৌযান ছিল তার মধ্যে ৩টি ছিল প্যাসেঞ্জার স্টিমার, ৫টি টাগ, ৫টি ওয়াগন-ফেরি বার্জ, ৬টি পল্টুন র‌্যাম্প এবং ১৫টি ফাট। এর মধ্যে, নৌযান রণাবেণের জন্য ১টি ভাসমান নৌযান মেরামত কারখানা ছিলো। বন্ধ ঘোষণা ও নিয়মিত ডগিং না হওয়ায় অকার্যকর হয়ে পড়ে জাহাজগুলো। শত শত কোটি টাকার এসব জাহাজ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে বালাসীঘাটরেলওয়ের মেরিন সুপারিনটেনডেন্ট (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রাসেল আলম জানান, পর্যায়ক্রমে ফেরিঘাটের স্থাপনা ও অকেজো মালামাল বিক্রি করা হচ্ছে। বাকিগুলোও বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যাতে জাহাজ ও ফেরিঘাটের সম্পদ নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছেন তারা। ফেরি সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিভিন্ন বিভাগে বদলি করে কাজে লাগানো হচ্ছে। মালামাল পাহারা ও রণাবেণের জন্য বালাসীঘাটে কিছু কর্মচারী আছে সম্পূর্ণরূপে স্থাপনা সমূহ বিক্রি হয়ে গেলে বাকিদেরও রেলের বিভাগে বদলি করা হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম জোনের আওতাধীন গাইবান্ধার বোনারপাড়া-তিস্তামুখঘাট ও ত্রিমোহনী-বালাসীঘাট রেলরুটের লাখ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ ও ভূসম্পত্তি প্রতিদিন চুরি হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ তাদের লোকজন গুটিয়ে নেওয়ায় এই দুই রুটের প্রায় ২৫ কিমি রেললাইনের মধ্যে অবস্থিত ত্রিমোহনী আর বালাসীঘাট রেলস্টেশন এখন অসামাজিক কার্যকলাপের আখরায় পরিণত হয়েছে। এ রেলপথের অসংখ্য স্থানে কাঠের স্লিপার পঁচে নষ্ট ও রেল ব্রিজের কাঠের স্লিপার চুরি হয়ে যাচ্ছে। বালাসীঘাট ও আনন্দবাজার রেল স্টেশনের টিনের তৈরি ঘর ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এখন তিস্তামুখঘাট, ভরতখালী রেল স্টেশন, বালাসী-ত্রিমোহিনী রেলপথে শুধু রেললাইন ছাড়া আর কিছুই নেই। এছাড়াও বোনারপাড়া-তিস্তামুখঘাট ও ভরতখালী রেলস্টেশন এলাকার প্রায় ২শ’ একর ভূসম্পত্তি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ভরতখালী থেকে তিস্তামুখঘাটের প্রায় আধা কিলোমিটার রেললাইনের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে, বিএনপি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ নানা রকমের স্থাপনা। 

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে তিস্তামুখঘাটটি বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হলে ত্রিমোহনী রেল স্টেশন থেকে বালাসী পর্যন্ত তিনটি রেল স্টেশ স্থাপন করা হয়। এবং পূর্বের তিস্তামুখ রেলওয়ে স্টেশন ও ভরতখালী স্টেশনটি একেবারে বন্ধ হয়ে আছে। বালাসী-বাহাদুরাবাদ ঘাট নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ফেরি সার্ভিল চালু হলে রেল ট্রেনের দরকার নেই। সে কারণেই স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন থেকে তিস্তামুখঘাট পর্যন্ত একটি শার্টল ট্রেন চালুর নির্দেশ যদি রেল মন্ত্রণালয় থেকে আসে সেক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে ট্রেন চালু করা সম্ভব। 

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট ডিভিশনাল এস্টেট অফিসার ও সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ সুজাউদ্দৈীলা বলেন, অবৈধ দখলের বিষয়ে অবহিত করলে তখন উচ্ছেদ অভিযানের ব্যবস্থা নেয় ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। এই বিভাগটির রয়েছে জনবল সংকট, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংকট। ফলে বড় ধরণের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় স্থবিরতা বিরাজ করছে।
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad