Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১-২-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:৫৪

ফুলছড়ির উদাখালী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ

ফুলছড়ির উদাখালী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ

ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি ►

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির গঠনে অবৈধভাবে ভোটার তালিকা প্রনয়ন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাকে অবজ্ঞা ও কর্মস্থলে অনুপস্থিত দপ্তরীর বেতন উত্তোলন সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার উদাখালী আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্মস্থলে আসেননি। ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে কর্মচারী হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই দপ্তরী অবিনাশ চন্দ্রের। সহকারী প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘স্যার বিশেষ কাজে বাহিরে আছেন। দপ্তরী অবিনাশ চন্দ্রের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, তার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান ভালো বলতে পারবেন। আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন শিক্ষক বলেন, ‘কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও দপ্তরীর নামে প্রতিমাসে বেতন উত্তোলন হচ্ছে।’

জানা যায়, উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন ও বিদ্যালয়ের দপ্তরীর অনুপস্থিতির বিষয়ে কয়েকজন অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্দেশে ৩০ মার্চ ২০২২ তারিখে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত হয়। এরপর গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়টি আটকে যায়।

তদন্ত প্রতিবেদন গোপন রেখে পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ননী গোপালের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে পরবর্তী ৬ মাসের জন্য উদাখালী আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর। সে অনুযায়ী আগামী ১২ মার্চ ২০২৩ তারিখে আহবায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী কোন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে পূর্বের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের ৮০ দিন পূর্বে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

নিয়ম অনুযায়ী চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের শেষ দিন ছিল ২২ ডিসেম্বর ২০২২ইং। কিন্তু উদাখালী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীতিমালাকে অমান্য করে মনগড়াভাবে গত ১০ জানুয়ারী অর্থ্যাৎ ৬২ দিন পূর্বে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নিমিত্তে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেন, যা নিয়মবর্হিভূত। প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল পরিকল্পিতভাবে কিছু অভিভাবককে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন থেকে বাহিরে রাখার উদ্দেশ্যে এমনটা করেছেন বলে ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক মনে করেন।

উদাখালী আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আবারও ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলে আমি ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারতাম। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে মনগড়াভাবে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছেন। আমার মেয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ভোটার তালিকা হওয়ার কথা কিন্তু আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল কালক্ষেপন করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে জানুয়ারীতে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছেন।

নিয়ম অনুযায়ী দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর অভিভাবক ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবেন না। প্রধান শিক্ষক এটা পরিকল্পিতভাবে অনিয়ম করেছেন। তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ভোটার তালিকায় অনিয়ম ছাড়াও প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতা করেছেন। প্রধান শিক্ষকের চাচাতো ভাই বিদ্যালয়ের দপ্তরী অবিনাশ চন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও তার নামে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে। দপ্তরীর কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে ইতিমধ্যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার মিলছে না।’

উদাখালী আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত, বিদ্যালয়ের নামে ভূয়া জমিদান করে দাতাসদস্য অন্তর্ভূক্তি ও শিক্ষকদের ডোনেশনের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ম্যানেজিং কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয় না। অথচ প্রতিষ্ঠাতার বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। প্রধান শিক্ষক আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ও আমার সহধর্মিনী মমেনা বেগমের নাম অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এমপিও হতে কর্তন করেছিলেন। পরবর্তীতে আদালতে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রেহাই পেয়েছেন এবং আমার সহধর্মিনীকে চাকুরীতে বহাল করেছেন। একজন দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের পক্ষে সবই সম্ভব।

এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল বলেন, ‘চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশে সামান্য সময়ের হেরফের হয়েছে। অভিযোগকারী মেনে নিলে কিছুই হবে না। ভোটার তালিকা প্রণয়নে সমস্যা থাকার কারণে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার বিষয়ে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনার কাগজ আমাকে দেখালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’ তবে দপ্তরীর অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad