সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর ►
পরিত্যক্ত ও অনাবাদি, বসবাড়ী বাড়ীর পার্শ্ববতী খোলা জায়গায় ও বাড়ীর ছাদের উপর আদা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বল্প পরিশ্রম ও স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই অধিক লাভবান হচ্ছে বস্তায় আদা চাষ করে চাষিরা । ইউটিউব ও টেলিভিশন চ্যানেলে দেখার পর বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার ধামইর ইউনিয়নের গোবিন্দ্রপুর গ্রামের এলজিইডি‘র
সার্ভেয়ার কর্মচারী হিসেবে চাকুরীরত মাহবুব রহমান (৩৬) ।
মাহবুব রহমান দিনাজপুর এলজিইডি জেলা অফিসের অধীনে সার্ভেয়ার কর্মচারী হিসেবে বোচাগঞ্জ উপজেলার এলজিইডি অফিসে কর্মরত থাকার পাশাপাশি জেলার এলজিইডির নিজস্ব এলজিইডির কল্যাণ সমবায় সমিতির নিজস্ব পিকনিক স্পট গোবিন্দ্রপুরে ছায়াযুক্ত গাছের নিচে ৫ হাজার বস্তায় আদার চাষ করে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন চাষী মাহবুব রহমান।
মাহবুব রহমান দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধামইর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের গোবিন্দপুর ব্লগে বস্তায় আদা চাষ দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষীরা আসতেছে । বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ও নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার ইউটিউব চ্যানেল এবং টেলিভিশন চ্যানেলের বিভিন্ন কৃষি প্রোগ্রাম দেখার পর বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে মাহবুব রহমান। নিজে একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও অবসর সময় নষ্ট না করে এলজিইডির নিজস্ব বাংলোতেই গড়ে তুলেছেন বস্তায় আলু চাষ । বস্তায় আদা চাষ ও পরিচর্চার দুইজন শ্রমিক সর্বক্ষণিকভাবে কাজ করছেন । শ্রমিকেরা বস্তায় আদা চাষের পরির্চচা করতে পেরে নিজেরা উৎসাহিত হচ্ছেন এবং অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন ।
আদা চাষী এলজিইডি কর্মচারী মাহবুব রহমান জানান, ইউটিউপ চ্যানেল ও টেলিভিশন চ্যানেলে বস্তায় আদা চাষ অনেক উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়ি । বস্তায় আদা চাষের জন্য মনস্তির করি এবং বিভিন্ন বাজার থেকে বস্তা সংগ্রহ করি এবং প্রতিটি বস্তা দুই থেকে তিন
টাকার মধ্যে হয়ে যায়। এরপর দোয়াশ মাটি গোবর সার ছাই পরিমাণ মত রাসায়নিক সার মিশিয়ে বস্তার মধ্যে সংরক্ষণ করি ।
এরপর বীজ আদা ইন্টারনেট ঘেঁটে রংপুর ও চট্টগ্রাম থেকে বারি-১ জাতের বীজ আদা সংগ্রহ করি । প্রতিটি বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম বীজ আদা বোপন করি। প্রতিটি বস্তায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা খরচ হয়েছে । কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা ১ শত বস্তাসহ বীজ আদা ও রাসায়নিক সার প্রদান করেন। আমি আরোও নিজস্ব ভাবে আরো পাঁচ হাজার বস্তা আদা রোপন করেছি ।
এখন প্রতিটি আদার গাছ এক থেকে দেড় ফিট পর্যন্ত উঁচু হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বস্তার গোড়ায় পানি স্প্রে করার কৌশল কীটনাশক স্প্রে করার নিয়ম সহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই বস্তার আদা হারভেস্টিং করতে পারব বলে আশা করছি। প্রতিটি বস্তা থেকে দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
শ্রমিক মহসিন জানান, মাহবুব ভাইয়ের বস্তায় আদা চাষের জমিতে নিয়মিত কাজ করছি। কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে এসে বস্তার আদা চাষের পরামর্শ প্রদান করছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পানি স্প্রে, কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। আদা গাছ অনেকটাই তরতাজা দেখা যাচ্ছে আশা করছি ফলনও ভালো হবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, এই ব্লগে মাহবুব রহমানকে কৃষি বিভাগ থেকে মসলা জাতীয় প্রকল্প থেকে আমরা কিছু বস্তা সরবরাহ ও বীজ আদা ও রাসায়নিক সরবরাহ করেছি। পাশাপাশি সে আরোও বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন। এতে করে বাজারে যে আদার চাহিদা রয়েছে তা অনেকটাই চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। চাষী ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবে বলেও আশা করছি।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, বর্তমানে মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অত্যন্ত চাহিদা সম্পন্ন একটি মসলা । দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় যেহেতু লিচু বাগান আমবাগান সহ অন্যান্য বাগান রয়েছে। সেই বাগানের মাঝেই বস্তায় আদা এবং হলুদ চাষ নতুন একটি পদ্ধতি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে । বস্তায় আদা উৎপাদন করলে উৎপাদন অনেক বেড়ে যায় । দিন দিন কৃষির জমি কমে যাচ্ছে তাই কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে আদা এবং হলুদ চাষে যেন স্বল্প জায়গা বা অনাবাদি জমিতেও বস্তায় চাষিরা আদা এবং হলুদ চাষ করে তাদের নিজেদের চাহিদা পূরণ সহ বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারে । আমরা বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শন করে আসছি এবং চাষীরাও দিন দিন এই বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে আগ্রহী হচ্ছে।