পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি ►
রংপুরের পীরগাছায় সরকারি নির্দেশনাকে অমান্য করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষককে বাদ দিয়ে এক জুনিয়র সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাঠক শিকড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার পাঠক শিকড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র রায় বুধবার (৫ জুলাই) চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত পরিপত্রানুযায়ী প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য হলে সহকারী প্রধান শিক্ষকই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। ওই প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নাজমা খাতুন বিদ্যমান থাকলেও সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে জুনিয়র একজন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন। এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে পাঠক শিকড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন প্রধান শিক্ষক। সেই কমিটি গঠনের বিষয়টি অভিভাবকসহ এলাকাবাসীকে জানানো হয়নি।
জুন মাসের শেষ সপ্তাহে গোপনে কমিটি গঠনের বিষয়টি ফাঁস হয়। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ফারুকুজ্জামান ডাকুয়া গোপনে অবৈধভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে প্রধান শিক্ষককে সহযোগিতা করেন বলে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন অভিভাবকরা। এরপরেও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ হন তারা। এক পর্যায়ে ওই কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন শিক্ষার্থীর অভিভাবক শহিদুল্লাহ কাওছার রুবেল। ম্যানেজিং কমিটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০২২ সালের ২৯ জুন রুল দেন আদালত।
আবেদনটির ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত জানতে চান, নিয়মবহির্ভূতভাবে কমিটি গঠন করায় কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। শিক্ষাসচিব, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরপর রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৩ ডিসেম্বর ম্যানেজিং কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। এরপরও আদালতের রায় অমান্য করে দুজন কর্মচারি নিয়োগসহ সেই অবৈধ কমিটি দিয়েই বিদ্যালয় পরিচালনা করেন প্রধান শিক্ষক।
হাইকোর্টের রায়ে ম্যানেজিং কমিটি অবৈধ হওয়ায় এডহক কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিয়মবহির্ভূতভাবে জুনিয়র সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জানান, সহকারী শিক্ষক মোশারফ হোসেন বিদ্যালয়ে এসে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন। কিন্তু তাকে কে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন তা জানাননি।
বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন বলেন, আমি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত থাকা সত্বেও নিয়ম লঙ্ঘন করে একজন জুনিয়র সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র রায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সুজা মিয়া বলেন, ম্যানেজিং কমিটি না থাকলে এডহক কমিটির প্রধান হিসেবে ইউএনও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করবেন। পাঠক শিকড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে জানবো।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, নিয়মবহির্ভূত কিছু করার সুযোগ নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষককেই দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।