• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১-৪-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:৫৩
  • ১৯৭ বার দেখা হয়েছে

ধানক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং

ধানক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং

কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক         

ধানের জমিতে গাছের ডাল, খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি ও ধইঞ্চার ডাল পোতা হয়। সেগুলোর উপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার এই পদ্ধতিকে পার্চিং বলা হয়। 

পোকা দমনের এ পদ্ধতি ব্যয়বিহীন এবং পরিবেশবান্ধব। পার্চিংয়ে পাখি বসার সুযোগ পেলে তার দৃষ্টিসীমায় কোনো ক্ষতিকর পোকা দেখা মাত্রই সেটা ধরে খেয়ে ফেলবে। দিনের বেলায় ফিঙে, শ্যামা ও শালিক পাখি পাচিংয়ে বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খায় এবং রাতের বেলায় লক্ষী পেঁচা এই ডালে/খুঁটিতে বসে ইঁঁদুর শিকার করে মাঠ ফসলে অবস্থানকারী ইঁদুরের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। পার্চিংয়ে বসে পাখিরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গী পোকা, শীষ কাটা লেদা পোকা, উড়চূঙ্গা সহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকা ধরে খায়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কীটতত্ত্ব বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পার্চিংকৃত জমিতে অবস্থানকারী পাখির খাদ্য থলিতে উপকারি পোকার চেয়ে অনিষ্ঠকারী পোকার সংখ্যা অনেক বেশী।

পার্চিংয়ে ফিঙ্গে পাখি অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশী বসে ও শিকার করে। ব্রির কীটতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানী ড. জহিরুল ইসলাম ও এম ওয়াহিদুজ্জামান ১৯টি ফিঙ্গের পেট চিড়ে পাকস্থলী পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখতে পান ফিঙ্গের পাকস্থলীতে ধানের ক্ষতিকারক পোকামাকড় ৪৯ ভাগ। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধানচাষে পার্চিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। একই বিভাগের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ধান গাছের শীর্ষ পাতা (ডিগপাতা) হতে ১০০ সেন্টিমিটার উঁচু এবং ১০০ বর্গমিটারে একটি ডাল (হেক্টরে ১০০টি/বিঘায় ১৬টি) খুবই কার্যকরী।

পার্চিং দুই ধরনের-

ডেড পার্চিং: মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং।

লাইভ পার্চিং: জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল জমিতে পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং।

ধান ক্ষেতে পার্চিং এর গুরুত্ব:

লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব, উৎপাদন খরচ কম হয়, মাটি, পানি তথা পরিবেশ দূষণ হ্রাস পায়, ইকোসিস্টেম অক্ষুন্ন থাকে, পাখির বিষ্টা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

পার্চিং পদ্ধতি:

পার্চিং এর জন্য কাষ্ঠল গাছের দুই তিনটি শাখাসহ ডাল অথবা বাঁশের কঞ্চি কাটতে হবে। তারপর ডাল বা বাঁশের কঞ্চি থেকে পাতাগুলো ছাড়িয়ে নিতে হবে। চারটি গোছার মাঝখানে খালি জায়গায় প্রতি ১০০ বর্গমিটার (২.৫ শতক) জমির জন্য একটি ডাল অথবা বাঁশের কঞ্চি  (হেক্টরে ১০০টি/বিঘায় ১৬টি) মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। গাছের ডাল অথবা শাখাসহ বাঁশের কঞ্চি পোঁতার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের পাতার শীর্ষ বিন্দু (ডিগপাতা) থেকে কমপক্ষে ১০০ সেন্টিমিটার বা ১মিটার হয়। তবে জমিতে পার্চিং ব্যবহারের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, এটি পাখি বসার উপযুক্ত কিনা। অর্থ্যাৎ ইহা শক্ত, ধান গাছের চেয়ে বেশ উঁচু হতে হবে এবং পাখি যেন তার উপর ভর দিয়ে বসতে পারে এবং পোকা দেখতে ও ধরতে পারে।

লেখক : কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক, সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার, ক্লাইমেট অ্যাকশন সেক্টর, ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়