সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর ►
হাসান আলি (৫৮)। বাশেঁর লাঠিতে তিন /চারটি জাতীয় পতাকা বাধা আছে। হাতেও বেশ কয়েকটি ছোট ছোট জাতীয় পতাকা। বাতাসে জাতীয় পতাকা উড়ছে আর তিনি রাস্তায় হাঁটছেন। তার নিকট থেকে জাতীয় পতাকা ক্রয় করে অনেকেই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন । দিনাজপুর শহরের ঘাসিপাড়ায় বসবাস করেন হাসান আলী। তার দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে লাল-সবুজের পতাকা ফেরি করে বিক্রি করছেন। দিনাজপুর শহরের অলিগলিতে লাল সবুজের পতাকা বিক্রির করছেন আর হেঁটে বেড়াচ্ছেন হাসান আলী। লাল সবুজের পতাকা বিক্রেতা হাসান আলীর সাথে কথা হয় আমাদের প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে লাল সবুজের পতাকা বিক্রির কাজটি করে থাকি। গত সাত দিন আগ থেকেই লাল সবুজের পতাকা বিক্রি শুরু করছি। প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা লাল সবুজের পতাকা বিক্রি হলেও ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে আগের দিন অর্থাৎ ১৫ ই ডিসেম্বর ৫ হাজার টাকার পতাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে দিনাজপুর গোড় এ শহীদ বড় ময়দানের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় পতাকা সহ ছোট বড় অনেক পতাকা বিক্রি হয়ে যাবে । বছরের চারটি দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা বা লাল সবুজের পতাকা বিক্রির ব্যবসাটি করেন তিনি। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ২১ই ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস,২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং পহেলা বৈশাখ এ চারটি দিবসেই তিনি লাল সবুজের পতাকা বিক্রি করে থাকেন। গত এক সপ্তাহ আগে ঢাকা থেকে ৩০ হাজার টাকার লাল সবুজের পতাকা ক্রয় করে করেছেন তিনি। দিনাজপুর। স্টেশনের রানওয়েতে তার একটি ষ্টেশনারী দোকান রয়েছে। সেখানেও অনেকেই লাল সবুজের পতাকা পাইকারি ধরে ক্রয় করেন। সেই ষ্টেশনারী দোকান থেকে অনেকে পাইকারি ধরে লাল সবুজের পতাকা ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। তিনি নিজেও জাতীয় দিবসের সাত দিন আগ থেকে ফেরি করে বিক্রি করেন লাল সবুজের পতাকা। লাল সবুজের পতাকা বিক্রেতা হাসান আলি বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর আগে থেকে তিনি এই লাল সবুজের পতাকা চারটি দিবস উপলক্ষে বিক্রি করেন। কারণ দিবসগুলো আসলেই এই পতাকা বিক্রি করা। তার দেশের কথা মনে করিয়ে দেয় বলে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশের মর্যাদা রক্ষার্থে তিনি ফেরি করি। তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের কাছে দেশের ভালোবাসা দেশের মমত্ব, দেশের গুরুত্ব ও দেশপ্রেম বিলিয়ে দেওয়ার জন্যই লাল সবুজের পতাকা বিক্রি করি। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বা লাল সবুজের পতাকা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন হলেও তিনি আসলেই এটিকে পবিত্র দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের কথাই বারবার প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, বড় সাইজের লাল সবুজের পতাকা বা জাতীয় পতাকা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, মাজারি সাইজের জাতীয় পতাকা ১০০ টাকা, ছোট সাইজের পতাকা ৫০ টাকা এবং ছোট ছোট বাচ্চাদের হাতে জাতীয় পতাকা ২০ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করি। জাতীয় পতাকা ক্রেতা মাইনুল ইসলাম মনু বলেন, আমাদের দেশের জাতীয় দিবস আসলেই হাসান আলী জাতীয় পতাকা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। জাতীয় পতাকা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করাটা তার ব্যবসা না হলেও তিনি অনেকটা নেশার খাতিরে এই কাজটি করেন। কারণ জাতীয় পতাকা বিক্রি করা মানে দেশের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করার সামিল বলে বিশ্বাস করেন। তার কাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের দুইটি জাতীয় পতাকা ক্রয় করেছি। ১৬ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে গিয়ে বাচ্চাদের জন্য আরো চারটি পতাকা ক্রয় করব। দিনাজপুর নিমতলার ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী বলেন, অনেকদিন ধরেই হাসান আলী চাচার কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে জাতীয় পতাকা ক্রয় করি। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং বিনয়ের সাথে জাতীয় পতাকা বহন ও বিক্রি করেন। কারণ তিনি একটি দেশের জাতীয় পতাকা একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন বিশ্বাস থেকেই তিনি এই জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন। দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল হুদা দুলাল বলেন, জাতীয় পতাকা বিক্রি এটি ব্যবসা নয় এটি হচ্ছে দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ। হাসান আলীর মত অনেকেই দিনাজপুর শহরের অলিগলিতে জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন। তারা দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ থেকেই জাতীয় পতাকা বিক্রি করেন। তবে যত সামান্য অর্থ উপার্জন করলেও দেশপ্রেম এখানে অনেক বড়। জাতীয় পতাকা বিক্রি করে বেশি লাভ হয় না। তবে দেশের ভালোবাসা, দেশের মর্যাদা, দেশের মমত্ব বহিঃপ্রকাশ করেছে তারা। তাদেরকে অবশ্যই স্যালুট প্রদান করা উচিত কারণ তারা দেশের গর্বিত সন্তান ।