• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৯-৬-২০২৩, সময়ঃ দুপুর ০২:১৬
  • ৩৩ বার দেখা হয়েছে

দিনাজপুরে লিচুর বাজার জমে উঠেছে, প্রতিদিন কোটির টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে

দিনাজপুরে লিচুর বাজার জমে উঠেছে, প্রতিদিন কোটির টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে

সুলতান মাহমুদ চৌধুরী ,দিনাজপুর ►

দিনাজপুরের লিচুবাগান গুলোতে লাল টসটসে রসালো বেদানা , চায়না থ্রি, চায়না ফোর, মাদ্রাজি , আর ফোজাফ্ফরী  লিচুগুলো ঝুলছে আর বাতাসে দোল খাচ্ছে। যা দেখলেই মুখে জল এসে যায়। টাটকা লিচু গাছ থেকে পেরে লিচু খাওয়ার মজাই আলাদা।  
 ভোর থেকেই এখন চলছে লাল টসটসে গাছের লিচুগুলো বাগানিরা গাছ থেকেই লিচুর ডাল সহ ভেঙ্গে নিচেই বাগানের নিচে বসেই ৫০ টি করে লিচু একত্রিত করে আঁটি বাধতে ব্যস্ত সময় পার করছে। সারাদিন লিচু বাগানিরা লিচু ভাঙার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।  এ সময় বাড়তি আয়ের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ৫০টি করে লিটু দিয়ে  আঁটি বাঁধার কাজ করে যাচ্ছে। 

সকাল হতেই শতশত অটো ভ্যান, কিংবা ভ্যানে করে লিচু ভর্তি করে দিনাজপুরের নিউমার্কেট লিচু বাজারে বিক্রির জন্য আনা  হয়।এরপর লিচু বিক্রেতা আর  ক্রেতাদেও মধ্যে  দরকষাকষির মধ্যেই  লিচুর বাজার  জমে উড়ে। এই লিচুর বাজার থেকেই  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। 

প্রতিদিন দিনাজপুরের লিচুর বাজারে কোটি টাকার লিচু বেচাবিক্রি হচ্ছে। এক কথায়  এই রসালো টসটসে লিচুর বাজার  জমে উঠেছে। তবে এ বছর লিচু বাজারের জায়গা ছোট ,প্রচুর গরম ও তীব্র তাপদাহ চলমান থাকায় লিচু চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সারি সারি ভ্যানে সবুজ পাতায় মোড়ানো টসটসে লাল লিচু। দেখলেই যেন জিভে জল আসে। ভ্যান নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতেই খুচরা বিক্রেতা ও আড়তদারেরা ঘিরে ধরছেন। এরপর পাতা সরিয়ে শুরু দাম ধরে হাঁকডাক। পরে উচ্চ দাম হাঁকা ক্রেতা ভ্যান নিয়ে আড়তঘরে যাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দিনাজপুর শহরের কালীতলা এলাকায় পৌরসভার নিউমার্কেটের ফলের দোকানগুলোতে এখন ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়। এখান কার লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা পাঠানো হচ্ছে । 

দিনাজপুরের লিচুর বাজারে  বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদানা ও চায়না থ্রি ও মোজাফফরপুরী কাঠাঁলী জাতের লিচু বাজারে   পাওয়া যাচ্ছে। এক হাজার বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫ শত থেকে ২ হাজার টাকা। এ বছর ১ হাজার মাদ্রাজি লিচু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। এক হাজার বেদানা লিচু ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। চায়না থ্রি জাতের ১ হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। মোজাফ্ফরী জাতের এক হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৭ হাজার টাকা। কাঠালী জাতের লিচু এখন বাজারে আসেনি।  

দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় নিউমার্কেট লিচুর বাজারের জায়গা ছোট হওয়ায় ভোগান্তি ও তীব্র তাপদাহের কারনে বাজারে লিচুর দাম তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। 

লিচু চাষী রহমত আলী বলেন, এবছর তীব্র খড়ায় লিচুর গুটি থেকে শুরু করে লিচু পাকা পর্যন্ত খড়ায় এ বছর অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর ফলন অনেক কম  হয়েছে। এ বছর তাপমাত্রা বেশি থাকায় লিচু গাছে নষ্ট হচ্ছে। লিচু চাষী আব্দুল মোমেন বলেন, এ বছর আমাদের যে পরিমান খরচ হয়ে তার অর্ধেক টাকা ফেরত পেয়েছি। কারন একটাই লিচু গাছেই নষ্ট হয়েছে। 

মাসিমপুরের লিচু বাগানী আব্দুল করিম চাকলাদার বলেন, এ বছরের লিচুর উতপাদনও বেশি হলেও তাপমাত্রার কারনে লিচুর অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর দাম কম রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। 

ছোট লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন এ বছর লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেমন আসেননি। স্থানীয়ভাবেই লিচুর চাহিদা অনেক বেশি। লিচুর রং খারাপ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লিচুর ব্যবসায় আগ্রহ কম। 

লিচু ক্রেতা মজিবুর রহমান বলেন, বাজারে বেশির ভাগ লিচুর গা পুড়ে গেছে। এই পছন্দ হয় না। যে লিচু দেখতে সুন্দর সেই লিচুর দাম বেশি। যেমন কিছু বেদানা লিচু, কিছু চালনা থ্রি লিচুর অনেক দাম।  

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক, কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন এ বছর জেলায় ৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান আছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না-থ্রি ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টর ও মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া বসতবাড়ির উঠান, বাগানসহ লিচুগাছ আছে প্রায় সাত লাখ। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন।

তিনি আরোও বলেন , দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা দেশব্যাপী। বিশেষ করে এখানকার বেদানা লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু। গত বছর ২৮ মেট্রিক টন লিচুর ফলন হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ মেট্রিক টন। তবে এবার বোম্বাই ও চায়নাথ্রি জাতের লিচুর ফলন কিছুটা কম। 
 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়