• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৭-৩-২০২৪, সময়ঃ দুপুর ০২:৫৮
  • ১৬৩ বার দেখা হয়েছে

দাম ভালো পাওয়ায় ক্ষেতেই আলু বিক্রি করছেন ফুলবাড়ীর কৃষক

দাম ভালো পাওয়ায় ক্ষেতেই আলু বিক্রি করছেন ফুলবাড়ীর কৃষক

ধীমান চন্দ্র সাহা, ফুলবাড়ী

হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির শঙ্কায়সহ আশানুরুপ দাম পাওয়ায় উৎপাদিত আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর আলু চাষিরা। এভাবে আলু বিক্রি হয়ে গেলে ফুলবাড়ী হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য আলু মিলবে না। এতে এ বছর আলুর ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে এবং এবারও বেশি দামে ভোক্তাদের আলু কিনে খেতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন হিমাগার সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে। এতে কার্ডিনাল, এস্টারিকা, রোমানা, সাদা পাটনাই, লাল পাটনাই প্রভৃতি জাতের আলু চাষাবাদ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন। 

এদিকে আশানুরূপ দাম ও চাহিদা থাকায় উপজেলার অনেক চাষি ক্ষেতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। বর্তমানে আলু উত্তোলনের ভরা মৌসুম চলছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমির উৎপাদিত আলু উত্তোলন করা হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। 

ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ নামের ১টি হিমাগারের আলু সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আলু সংরক্ষণ শুরু হলেও তা আশানুরূপ নয়। অন্যান্য বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহে যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণ হয়েছিল, একই সময়ে এ বছর তা হয়নি। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, গত বছর বেশি আলু সংরক্ষণ বা মজুতের অভিযোগে অনেক ব্যবসায়ীর জরিমানা হয়েছে। সে কারণে তারা এ বছর আলু সংরক্ষণের সাহস পাচ্ছেন না। এ ছাড়া ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় হিমাগার ভাড়াসহ ঝক্কি এড়াতে চাষিরা ক্ষেতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। 

ফুলবাড়ী হিমাগারের ব্যবস্থাপক আবুল হাসনাত বলেন, ‘অন্যান্য বছর চাষিরা আলু রাখার জন্য ধরনা দিতেন। কিন্তু এ বছর আলু সংরক্ষণে চাষিদের পেছনে ছুটতে হচ্ছে।’ হিমাগারে সংরক্ষণে গত বছর প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলুর ভাড়া ৩২০ টাকা ছিল। চলতি বছর বিদ্যুতের দাম বাড়ার শঙ্কায় এখনও হিমাগার মালিক সমিতি ভাড়া নির্ধারণ করেননি। তবে সরকারিভাবে আলু সংরক্ষণের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিকেজি ৭ টাকা হিসেবে। 

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, আলু উত্তোলনের ধুম পড়েছে। নারী-পুরুষ মিলে ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন। ক্ষেতেই আছেন ক্রেতারা (পাইকার)। ওই আলু বস্তায় ভরে ট্রাকে করে পাঠাবেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। 

উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের বুজরুক সমশেরনগর (পাঠকপাড়া) এলাকার আলু চাষি রুবেল বাবু বলেন, এ বছর তিনি দেড় বিঘা জমিতে কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ করেছেন। ২০ টাকা কেজি দরে সব আলু স্থানীয় পাইকারের কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, এ বছর বীজ, সার, কীটনাশক কেনাসহ আলু উৎপাদনে দেড় গুণ বেশি খরচ হয়েছে। গত বছরের মতো শেষ দিকে যদি আলুর দাম পড়ে যায় তবে লোকসান গুনতে হবে।

দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের আলু চাষি পরিক্ষিত চন্দ্র রায় বলেন, তিনিও দুই বিঘা জমিতে কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ করেছিলেন। গত এক সপ্তাহ আগে ২১ টাকা কেজিদরে ক্ষেতেই বিক্রি করে দিয়েছেন। আলুর ভরা মৌসুমেও আলুর দাম ও চাহিদা দুটোই থাকায় হিমাগারে রাখার বাড়তি খরচসহ ঝুক-ঝামেলায় না গিয়ে ক্ষেতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন।

স্থানীয় আলু ব্যবসায়ীরা বলেন, মৌসুমে চাষি পর্যায়ে আলু কিনে প্রতিবছর হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়, যা বছরজুড়ে বাজারগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছর বেশি আলু সংরক্ষণের দায়ে অনেক ব্যবসায়ীর জরিমানা গুণতে হয়েছে। সে কারণে এ বছর আলু সংরক্ষণের আগ্রহ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়