Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৫-১-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:১৬

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর সাথে বন্যপ্রাণির সখ্যতা 

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর সাথে বন্যপ্রাণির সখ্যতা 

ভবতোষ রায় মনা ►

কমছে ঝোঁপঝাড়, নদী-নালা, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জমির পরিমাণ। সেইসঙ্গে এসব জায়গায় বসবাস করা বিভিন্ন বন্যপ্রাণিও বিলুপ্ত হচ্ছে ক্রমে। এমনকি বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ এবং সংকটের কারণে কমে যাচ্ছে প্রকৃতির বহুবিধ উপকারী প্রাণি বেজিও। তবে ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী গ্রামে। ছোট শিশু উদাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে একটি বেজি। সব সময় হাবিবার সাথে সাথে থাকে বেজিটি। কখনও হাতে, আবার কখনও বা মাথায় চড়ে বসে বেজি। হাবিবার মুখের শব্দ ও হাতের ঈশারায় চলাফেরাও করে বেজিটি। এ এক আশ্চার্য্য ঘটনা। বেজি ও হাবিবার সখ্যতা দেখতে প্রতিনিয়ত মানুষজন ভীড় করছে পুরাতন নবাবগঞ্জ বাজারে তাদের চায়ের দোকানে। 

বেজির বৈজ্ঞানিক নাম Herpestes auropunctatus। ইংরেজি নাম Small Indian Mongoose। এরা Carnivora বর্গের Herpestidae গোত্রের ছোট, মাংসাশী স্তন্যপায়ী এবং শিকারি প্রাণী। এদের আকার প্রায় ২৮ সেন্টিমিটার এবং ঝোপালো লেজের দৈর্ঘ্য প্রায় ২সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন দেড়-দুই কেজি। লোমশ শরীর, দ্রুত নিঃশব্দে চলাফেরা করতে পারে। বেজি খুব ভালো শিকারি প্রাণি। এরা দিনের বেলায় খাবার খায়। রাতে নিজেদের তৈরি করা মাটির গর্তে অথবা শহর বা গ্রামে ঝোঁপঝাড়ে এদের বসবাস। ছায়াযুক্ত স্থানে একাকি বা জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়। মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। এদের গর্ভধারণকাল ৬০-৬৫ দিন। প্রতি প্রসবে ছানা হয় ২-৪টি। মেয়ে বেজি একাই বাচ্চা লালন-পালন করে। প্রয়োজনে বাচ্চার ঘাড় কামড়ে ধরে স্থানান্তর করে। সারাদেশেই আছে এরা, তবে সংখ্যায় খুবই কম। 

বেজি ফসলের খেতের ছোট-বড় ইঁদুর, সাপ, মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, পাখি এমনকি পাখির ডিম খায়। মাঝে মধ্যে এরা হাঁস-মুরগি, কবুতরের ছানা এবং অন্যান্য ছোট প্রাণিও খায়। তাই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বেজিকে শক্র মনে করে। তবে দুয়েকটা হাঁস মুরগির ছানা খেয়ে বেজি কৃষকের যে তি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে ফসলের খেতের ইঁদুর ও পোকামাকড় খেয়ে। এছাড়াও বেজি যে অঞ্চলে থাকে, সে অঞ্চলে সাপ থাকে না।

বিষধর সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় এবং বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খেয়ে বেজি পরিবেশের ভারসাম্য রায় অসামান্য অবদান রাখে। গৃহপালিত কুকুর এদের দেখলেই ধাওয়া করে এবং হত্যা করে। মানুষ ও কুকুর ছোট বেজির প্রধান শক্র। এছাড়া দেশের বেদে সম্প্রদায় বেজি পুষে সাপের সঙ্গে খেলা দেখানোর জন্য, যা প্রকৃতিবিরোধী কাজ।
উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মরিচাপাড়া গ্রামের উম্মে হাবিবা (৯) বলেন, সারাদিন আদর করি, মাছ, মাংস, ডিম, সিঙ্গারা, পরোটা খাওয়াই, সেম্পু দিয়ে গোসল করাই, রাতে আমার সাথে ঘুমায়। ওর ক্ষুদা লাগলে কেস কেস করবে, তখন ওকে খেতে দিতে হবে। সময় মত খেতে না দিলে রেগে যায়।

ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রায় বেজির অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৃতিতে এদের টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরি এবং মানুষের প্রয়োজনেই বেজিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণি সংরণ করা দরকার। ছোট শিশু হাবিবার কাছে বেজির পোষ মানা সত্যিই অবিশ্বাস্য ঘটনা। 

এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাসুদার রহমান সরকার জানান, বেজি সম্পর্কে আমাদের দেশে একটা ভুল ধারণা আছে, সাপের কামরে বেজির কোনো তি হয় না। বেজিও কিন্তু ভাইরাস বহন করে। যেহেতু তারা জানেনা। সেক্ষেত্রে ওই পরিবারের সদস্যদের ভাইরাস প্রতিরোধক ঠিকা নেওয়া দরকার। কারণ বেজির কামড়ের কুকুরের মত জালাতঙ্ক রোগ হতে পারে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad