মহিমাগঞ্জ (গোবিন্দগঞ্জ) প্রতিনিধি►
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া ও বাঙ্গালী নদীতে পানি বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এর ফলে উপজেলার দুই ইউনিয়নের তিন-চারটি পয়েন্টে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
করতোয়া নদীর কাটাখালী পয়েন্টে (চকরহিমাপুর স্টেশন) আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ২৪ ঘন্টায় এখানে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ সেন্টিমিটার।
আজ শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়া ও বোচাদহ এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে বোচাদহ এলাকায় প্রায় ৬শ’ মিটার অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী রাখালবুরুজ ইউনিয়নের বিষপুকুর এলাকাতেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, যে কোন মূহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বাড়িঘর তলিয়ে যেতে পারে।
তারা অভিযোগ করেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির উন্নয়ন বোর্ডের কোন কার্যক্রম না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাঁধটি ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যার সময় আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কিছু বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হলেও স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এ কারণে প্রায় প্রতিবছরই বাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানি ঢুকে পড়ায় স্থানীয়রা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।
চরবালুয়া গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল আলম রাজা বলেন, ভাঙ্গন রোধে অবিলম্বে স্থায়ী ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর, শিবপুর, শালমারা ও রাখালবুরুজ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতশত একর জমির উঠতি আখ, কলা, আগাম সব্জি ও আমন ধানের আবাদসহ বিভিন্ন ফসল এবং বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হাফিজুর রহমান জানান, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি স্থানে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উপজেলার বিষপুকুর, বালুয়া, বোচাদহ ও পলাশবাড়ির কিসামত চেরেঙ্গা পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন পরিস্থিতি রোধ করা হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়াামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধটি পরিদর্শন করে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নিক্ষেপ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। বিষপুকুর এলাকার ভাঙ্গনঝুঁকিতে পড়া বাঁধের অংশে জিও ব্যাগ নিক্ষেপের আগে সেখানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নদীযে কোনো মূল্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি রক্ষা করতে পাউবো সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।