Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৯-৬-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৫:৫৩

জমি হারালো পীরগঞ্জের কৃষকরা পাউবো দুষছে ডিও লেটারকে

জমি হারালো পীরগঞ্জের কৃষকরা পাউবো দুষছে ডিও লেটারকে

পীরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি ► 

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়িত্বহীনতা এবং গাফিলতির কারণে পীরগঞ্জের কৃষকরা জমি হারিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত আবাদি জমিতে পাউবো খাল খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করায় অভিযোগ দিলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। উপজেলার শানেরহাট ও পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের শাটেক-বাটেক খাল খননে ঘটনাটি ঘটেছে।

রংপুর পাউবো সুত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জের ১৫ টি ইউনিয়নে প্রায় ২'শ ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১'শ ৬২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খাল খননের জন্য রংপুর পাউবোকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডিও লেটার দেন। ওই ডিও লেটারে উল্লেখিত খাল ও নদী খননের জন্য নক্সা তৈরির লক্ষ্যে পাউবো পীরগঞ্জে যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খাল/নদী খননের নক্সা প্রস্তুত করে। এতে প্রায় ১'শ ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ওই নক্সায় পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের হিলি মৌজায় সাটেক-বাটেক খালটি ঠাকুরগাঁও জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'মেসার্স মোঃ জামাল হোসাইন' খনন শুরু করে।

খালটির অংশ হিসেবে শানেরহাট ইউনিয়নের পালানু শাহাপুর গ্রামে রাউৎপাড়া গ্রামের বিধবা আবেদা বেগম এবং তার ভাসুরের সাড়ে ৮ একর জমিতে খনন করে। অথচ ওই জমিতে ৪০ বা ৬২ সালের মাঠ রেকর্ডে এবং মানচিত্রে নদী, খাল, জলাশয় বা খাস জমির অস্তিত্ব নেই। খননের সময় আবেদা বেগমের পুত্রবধূ শিরীন আক্তার, তাদের জমির আধিয়ার হায়দার আলীসহ কয়েকজন বাঁধা দিলেও ঠিকাদারের লোকজন নানান হুমকি দিয়ে খালটি খনন করে। এতে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে খনন এবং মাটির স্তুপ হয়। এ ঘটনায় আবেদা বেগমের ছেলে আছাদুর রহমান রংপুর পাউবো সহ বিভিন্ন মহলে লিখিত অভিযোগ দেন। 

অভিযোগে জানা গেছে, ৪০ কিংবা ৬২ সালের মাঠ জরিপের মানচিত্রে খাল কিংবা খাস বা জলাশয়ের উল্লেখ না থাকলেও চলতি মওসুমে পীরগঞ্জে একাধিক স্থানে জোরপূর্বক খনন করায় স্থায়ীভাবে খালে পরিণত হচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ কৃষকের আবাদী জমির শ্রেণিও পরিবর্তন হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সদর ইউনিয়নের হিলি গ্রামের হায়দার আলী বলেন, আমাদের আবাদী জমি রক্ষায় জীবন দিয়ে চেষ্টা করেও সফল হতে পারছি না। আমার আবাদি জমিতে খাল খননে বাঁধা দিতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন আমাকে মেরে ফেলে খালের নীচে পুঁতে রাখার হুমকি দিয়ে খাল খনন করে।

উপজেলার শানেরহাট ইউনিয়নের রাউতপাড়া গ্রামের আছাদুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের পালানু শাহাপুর গ্রামে আমাদের সাড়ে ৮ বিঘা (৫০ শতকের) আবাদী জমিতে অন্যায়ভাবে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে সাটেক-বাটেক খাল খনন করেছে। ওই জমিতে ৪০ ও ৬২ সালের মানচিত্রে বা বর্তমান মাঠ জরিপে খালের বা খাস জমির অস্তিত্ব না থাকলেও তারা খাল খনন করেছে। আমার দেয়া অভিযোগটি দায়সারাভাবে তদন্ত করেছে।

উপসহকারী বিভাগীয় প্রকৌশলী মুহিবুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করেছি। এখন স্যারেরা বিষয়টি দেখবেন। নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা ডিজাইন পেয়ে খনন করছি। ক্ষতিগ্রস্থর পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করা হয়েছে।

রংপুর পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, আমি রংপুরে নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় পীরগঞ্জে খাল খননের নক্সা করি। ওই সময় পীরগঞ্জে গিয়ে খাস, খাল ও জলাশয়ের জমি নির্ধারন করে ১৬২ কিলোমিটারের পরিবর্তে মাত্র ৪২ কিলোমিটার খাল/নদী খননের নক্সা প্রস্তুত করা হয়। লোকবল কম থাকায় প্রতিটি এলাকায় গিয়ে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব না হওয়ায় কৃষকের কিছু জমি খালের মধ্যে পড়েছে।

আমরা এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থকৃষকের কাছ থেকে অভিযোগও পেয়েছি। তদন্তও করা হয়েছে। তিনি কৃষকের জমিতে খাল খননের কথা স্বীকার করে বলেন, এখন কিছুই করার নেই। তবে খননের সময় বাঁধা দিলে কৃষকরা উপকৃত হতেন। 
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad