Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৪-৬-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:৩৭

চরবাসির ভরসা বাশের সাঁকো

চরবাসির ভরসা বাশের সাঁকো

এ মান্নান আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ ►

যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের ব্যাপক সাফল্য বিরাজমান। পদ্মা সেতু, তিস্তা পিসি গার্ডার সেতু, উড়াল সেতু, মেট্রোরেল, চারলেন বিশিষ্ট সড়কসহ নানাবিধ উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তেমন কোন উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলে লাগেনি কোন প্রকার উন্নয়নের ছোঁয়া। রাজনৈতিক বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট উপজেলার উন্নয়ন। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার অসংখ্য শাখা নদী পারাপারের জন্য একমাত্র ভরসা হচ্ছে বাশের সাঁকো। প্রায় অর্ধশত বাশের সাঁকোর উপর দিয়ে ঝুকি নিয়ে পারাপর করছেন চরবাসি।  

১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে উপজেলার পরিসর। দু’টি রেল ষ্ট্রেশন রয়েছে এই উপজেলায়। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে তিস্তানদী প্রবাহিত। প্রতিবছর বন্যা আসার আগে চরবাসি যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাদের একটাই ভাবনা বন্যার ৬মাস কিভাবে তারা যাতায়াত করবে।

উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের চরবাসিকে উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগ করতে হলে কমপক্ষে ৫ হতে ৬টি শাখানদী ও নালা পার হতে হয়। আজ পর্যন্ত ওইসব শাখানদী ও নালার উপর নির্মাণ হয়নি সেতু বা ব্রিজ। বন্যা আসার আগে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ বা কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে তার উপর দিয়ে চলাচল করে থাকে। নড়বড়ে বাশেঁর সাঁকো চরবাসির একমাত্র ভরসা। 

তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা চরের স্কুল শিক্ষক মাহফুজার রহমান জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি বাঁশ ও কাঠের সাঁেকা দিয়ে নদী পার হয়ে চলাচল করছে। বন্যার সময় নিদারুন কষ্ট করতে হয় চরবাসিকে। বিশেষ করে স্কুল কলেজগামি শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু ও প্রসিুতি মা’দের নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হয়। সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও চরাঞ্চলে তো কোন প্রকার উন্নয়ন চোখে পড়ে না। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও আমরা চরবাসি কোন উন্নয়ন চোখে দেখলাম না।

বেলকা নবাবগঞ্জ চরের ব্যবসায়ী ফরমান আলী জানান, উপজেলার সাথে চরাঞ্চলের যোগাযোগের কোন প্রকার ব্যবস্থা না থাকায় অতিকষ্ট করে মালামাল নিয়ে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে চরাঞ্চলে। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় প্রতিবছর বিভিন্ন শাখানদী ও নালার উপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে কোনমতে চলাচল কতে হচ্ছে। আজ পর্যন্ত কোন প্রকার ব্রিজ তৈরি হয়নি। চরবাসি উন্নয়ন বঞ্চিত। 
তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তার ইউনিয়নে কমপক্ষে ৬টি শাখানদী ও নালা রয়েছে। ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ চরাঞ্চল হতে ওইসব শাখানদী ও নালা পার হয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করে। প্রতিবছর বাঁশের ও কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে দিতে হয়। তা না হলে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। ওইসব শাখানদী ও নালার উপর ব্রিজ বা সেতু নির্মাণের জন্য বহুবার চাহিদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন প্রকার সেতু বা ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। চরবাসি উন্নয়ন হতে বঞ্চিত। উন্নয়নের ছোঁয়া শহর এলাকায় লাগলেও গ্রামগঞ্জে কোন প্রকার উন্নয়ন আজও পরিলক্ষিত হয়নি।

উপজেলা জাতীয় পাটির সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নান মন্ডল জানান, স্বাধীনতার পর মাত্র একবার সরকার দলীয় এমপি নির্বাচিত হয়েছিল এই উপজেলায়। এরপর সরকারের বিপরীত দলের এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছে।  রাজনৈতিক বৈষম্যের উপজেলায় কোন প্রকার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই উপজেলায়। বর্তমানে এই উপজেলায় লোকসংখ্য কমপক্ষে ৭ লাখ। কিন্তু এই উপজেলা বরাদ্দ দেয়া  হয় ১৯৯১ সালের আদম শুমারির হিসাব অনুযায়ী ৪ লাখ মানুষের। বর্তমান জাতীয় পাটির  সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় সংসদে বহুবার উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চল নিয়ে কথা বলেছেন । তারপরও কোন উন্নয়ন আজও হয়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল জানান, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে তিস্তানদী প্রবাহিত। প্রতিবছর বন্যার সময় চরবাসির কষ্ট হয়। চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক ঘাটতি রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য মন্ত্রনালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।    

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad