• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৮-৪-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:৩০
  • ১০০ বার দেখা হয়েছে

গ্রাম-শহরে বিদ্যুতের লুকোচুরি, অতিষ্ঠ গাইবান্ধাবাসী

গ্রাম-শহরে বিদ্যুতের লুকোচুরি, অতিষ্ঠ গাইবান্ধাবাসী

ভবতোষ রায় মনা/আবু সায়েম

গাইবান্ধাসহ সারাদেশেই বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। তার মধ্যেই দিনে-রাতে হচ্ছে ঘন ঘন লোডশেডিং। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে বেশি। এ অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার সাত উপজেলার জনজীবন। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে সেই তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দু’একদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে বায়ুর আদ্রতা বাড়ার কারণে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সব বয়সী মানুষ। সেইসঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। গ্রাম কিংবা শহরে দিন-রাতের অধিকাংশ সময়ই চলছে বিদ্যুতের লুকোচুরি। এতে করে ঠিকমত সেচ পাম্পগুলো চালানো যাচ্ছে না। ফলে চলতি বোরো মৌসুমের ধানের আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে এ জেলার কৃষকেরা। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কচুয়ার খামার গ্রামের কৃষক হাবিজার রহমান বলেন, বোরো ধান আমাদের প্রধান ফসল। বোরো আবাদের এই সময়টা সব সময় জমিতে পানি রাখতে হবে। পানি না থাকলে ধানের সমস্যা হয়ে যাবে। কয়েক দিন ধরে কারেন্ট আসে আর যায়। পুরো দিনে এক বিঘা জমি পানি দিয়ে ভাসাতে পারি না। এ নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি।

এদিকে ঈদ ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলা-উপজেলার মার্কেট, ছোট-বড় শিল্প কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে ক্রেতারাও দোকানে যেতে চায় না। আবার ঈদ ঘিরে বিদ্যুৎ নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোও ঠিক সময়ে গ্রাহকদের কাঙ্খিত পণ্যও সরবরাহ করতে পারছে না। এতে করে তারাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। গাইবান্ধা শহরের চৌধুরী মার্কেটের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, কি দিন আর কি রাত বিদ্যুৎ শুধু আসে আর যায়। ঈদের এই সময়টা আমাদের ব্যবসার সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এ সময়ে লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা বিপাকে পড়েছি। 

শহরের এসকেএস প্রিন্টার্সের ম্যানেজার তাওহিদুর রহমান বলেন, ঈদ ঘিরে অনেক মালামালের অর্ডার আছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে দিন-রাতের অধিকাংশ সময় আমাদের অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। গ্রাহকদের মালামাল ডেলিভারি নিয়ে আমরা বিপাকে আছি। সেমাই তৈরির শ্রমিক সায়দার রহমান জানান, ১ ঘণ্টা ২ ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ আসে এরপর আধাঘণ্টা থেকে আবার চলে যায়।

অন্যদিকে রোজার মধ্যে গরমের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে গাইবান্ধায় ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা বিরাজ করেেছ। অতিরিক্ত গরমের কারণে প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। অবশ্য রাতে ঘরে ফিরেও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে রাতেও ঘেমে ভিজে নাকাল হচ্ছে মানুষ।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের সিজু মন্ডল জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। তারাবিহ নামাজের সময় আরেক দফা গিয়েছে। রাত ২টা ২১ মিনিটে লোডশেডিং ছিলো এক ঘণ্টা। ভোর সাড়ে ৫টায় আবার লোডশেডিং শুরু হয়। এবারও বিদ্যুৎ ছিলো না এক ঘণ্টা। তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে ফ্যান চালিয়েও ঘরে থাকা যায় না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে মনে হয় ‘ভয়ঙ্কর আজাব’ শুরু হলো। মশার যন্ত্রণায় বাইরে বসে থাকারও উপায় নেই। এই কষ্ট বলে বোঝাতে পারবো না। 

রিকশাচালক মো. মাইনুর মিয়া বলেন, সূর্যের অনেক তাপ। রোদে সারা শরীর পুড়ে যায়। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আর বিকালে ৫টার পর থেকে গরম কিছুটা কম থাকে। সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপদাহ থাকে। মনে হয় যেন চামড়া জ্বলে যাচ্ছে। শরীর ঘেমে যায়। শরীর দূর্বল হয়ে আসে। রিক্সা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। 

শহরের পলাশপাড়ার মিলন খন্দকার বলেন, বাতাসে যেন আগুন উড়ছে। প্রচণ্ড গরম। গরমের সাথে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এই গরমে বাইরে যেমন বের হওয়া যাচ্ছে না, তেমনই ঘরেও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। 
শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা রাসেল বলেন, একদিকে সিয়াম সাধনার মাস অন্যদিকে তীব্র তাপদাহ। কর্মব্যস্ততা শেষ করে যে বাসায় ফিরে কোথায় স্বস্তিতে থাকব, সেখানে দিনে ও মধ্যরাতে ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। এই গরমে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসিফ জানান, গাইবান্ধা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ মেগাওয়াট, সেখানে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৫ মেগাওয়াট। সে হিসেবে ঘাটতি রয়েছে আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ কারণে এলাকাভেদে লোডশেডিং হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো: আব্দুল কুদ্দুস মুঠোফোনে বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকেই গরম বাড়ছে। সে কারণে মানুষের বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। তাছাড়া ঈদকে সামনে রেখে অফিস, প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কলকারখানাগুলোতেও আগের চেয়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় আমরা সরবরাহ সেরকম পাচ্ছি না। আশা করছি দু’একদিনের মধ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। 

নিউজটি শেয়ার করুন


এ জাতীয় আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়