নিজস্ব প্রতিবেদক►
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যার মামলায় সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গাইবান্ধায় সমাবেশ হয়েছে। এ সময় সম্প্রতি ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগকারী ‘ভূমিদস্যুদের’ দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানানো হয়।
আজ (শনিবার, ২৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) এর সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে তীর-ধনুক বাদ্যযন্ত্রসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে সাঁওতাল নারী-পুরুষরা অংশ নেন।
দশ বছরেও তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার হয়নি বলে আক্ষেপ করে বক্তারা বলেন, এতদিনেও কোনো আশার বাণী বাস্তবায়িত হয়নি। নির্যাতনের শিকার আদিবাসী সাঁওতালরা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপরন্ত নতুন করে সাঁওতালদের বাড়িতে আক্রমণ করছে ভূমিদস্যুরা।
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ঘটনার করুণ কাহিনী উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আহতরা উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে কেউ পঙ্গু, কেউ শরীরে গুলির স্প্রিন্টার নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় কর্মক্ষমতা হারিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন।
বক্তারা আরও বলেন, শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ হত্যাকান্ড ঘটনার পর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে স্থানীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা করেন। কিন্ত বিচার হওয়া তো দূরের কথা মামলার আসামি সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আকন্দসহ অন্যান্য মূল আসামিদের কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। এছাড়া সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ইক্ষু খামারের সাঁওতালদের বসবাসকৃত ১ হাজার ৮৪২ একর পৈত্রিক সম্পত্তি ফেরত দেয়ার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, অতি সম্প্রতি রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় আদিবাসী সাঁওতাল পল্লীর ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে ভূমিদস্যু রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা। তারা ব্রিটিশ সরেনের বৃদ্ধ মাকে মারপিট করে গুরুতর আহত করেন। কিন্তু রফিকুল চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও অন্যান্য দুর্বৃত্তরা এখনও গ্রেপ্তার হননি। অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান বক্তারা।
আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ওয়াজিউর রহমান রাফেল, বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রজতকানিত্ম বর্মন, জনউদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্ত্তী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, আইনজীবী কুশলাশীষ চক্রবর্ত্তী সাগর, সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী মনির হোসেন সুইট, মোর্শেদ হাবীব দীপন, আদিবাসী নেতা ব্রিটিশ সরেন প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন আইনজীবী ফারুক কবীর ও সাঁওতাল নেত্রী সুচিত্রা মুরমু তৃষ্ণা।