ভবতোষ রায় মনা ►
ফুল ভালোবাসা, সৌন্দর্য, বিশুদ্ধতা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে যেমন ফাল্গুনের, ভালোবাসার, অন্যদিকে শ্রদ্ধার। এ মাসে ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর বিশেষ দিন রয়েছে। মাসটিকে ঘিরে তাই ফুলের বেচা-বিক্রি হয় জমজমাট। ফুল ব্যবসায়ীদের জন্য সিজন হিসেবে খ্যাত ফেব্রুয়ারি। এদিকে দিবস ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধার ফুল চাষিরা। এবার গাইবান্ধায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে ফুল চাষীরা তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রয় করবে কোটি টাকার মতো। প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে ফুল ব্যবসায়ীরা বিশেষ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৩ হেক্টর জমিতে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস ও জারবেরাসহ দেশি-বিদেশি ফুলের চাষ হয়েছে। এখানের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের উপযোগী হওয়ায় কম খরচে দ্বিগুণ আয় হয়। এজন্য জেলায় দিন দিন বাড়ছে ফুল চাষ। বছরের অন্যান্য সময় ফুল চাষিদের আয় কিছুটা কম হলেও বিভিন্ন উৎসব ও দিবসে আয় হয় দ্বিগুণ।
ফুল বাগানের শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন, বাগানে কাজ করে যা মজুরি পাই তা দিয়ে সংসারে খরচ চালাই তাতে সংসার ভালোই চলে।সংসারে সহযোগিতা করি। ফুলবাগানের শ্রমিক রহমত আলী বলেন, আগে দুরে কাজের জন্য যেতে হত, কিন্তু বাড়ির পাশে ফুল বাগানে কাজ মেলায় সারাদিন কাজ করে ৫০০ শত টাকা পাই, এ দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালই আছি।
ফুলচাষী আশরাফ আলী বলেন, কয়েকদিন পরই ফুলের চাহিদা বাড়বে কয়েকগুণ। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিশেষ করে দুই দিবস ঘিরে কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। এতে চাষি এবং ব্যবসায়ী উভয়ে লাভবান হবেন। তবে বিভিন্ন স্থানে সঠিক সময়ে ফুল পাঠাতে না পারায় অনেক লোকসান হয়।
সাদুল্লাপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের ফুলচাষি মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বাগানে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, গোলাপ, গাঁদা ও রজনীগন্ধার চাষ হয়। তবে করোনা পর এবার এক বিঘা জমির বাগানে শুধু গোলাপ আর গাঁদার চাষ করেছি। বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ফুলের ভরা মৌসুমে আমাদের নাওয়া খাওয়া থাকে না। তবে তুলনামূলক ফুলের চাহিদা ও দাম এখনো একটু কম। বর্তমানে গোলাপ ৮ থেকে ১০ টাকা পিস ও গাঁদা ৬০০-৭০০ টাকা প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমির ফুল মৌসুমে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়।
ফুল বিক্রেতা লিটন বলেন, আমরা কিছু ফুলের ডালা বানিয়ে রেখেছি, যেগুলো ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকায় বিক্রি করছি। আর বাকি সব অর্ডার পেয়েছি। তবে বিজয় দিবসের চেয়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে তাদের ফুল বিক্রি বেশি হয় বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, বর্তমানে ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তাদের প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মমতো ফুলের জমিতে ওষুধ দিতে বলা হয়েছে।