Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৩০-১-২০২৩, সময়ঃ সকাল ০৯:৩৩

আসামির অস্ত্র যখন নিজের মল!

আসামির অস্ত্র যখন নিজের মল!

মাধুকর ডেস্ক ►

সন্ধ্যা ৬টা। হঠাৎ পুলিশের কাছে খবর আসে মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানসংলগ্ন এক নম্বর সড়কের একটি বাসায় হোরোইন বিক্রি হচ্ছে। ওই বাসাটি পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি মো. আলাউদ্দিনের। সোর্সের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে সেখানে অভিযানে যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের একটি টিম। বাসা ঘেরাও করে ভেতরে ঢোকার পরপরই আলাউদ্দিন বাঁচার জন্য অচিন্তনীয় কৌশল নেয়।

নিজে মল ত্যাগ করে তা হাতে-পায়ে মাখায়। এরপর মলের কিছু অংশ ছুড়ে মারে পুলিশ সদস্যদের গায়ে। এতে হতচকিত হন পুলিশ সদস্যরা। মল ছুড়ে স্ত্রী ও সন্তানসহ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সে। পুলিশ ধাওয়া করে আলাউদ্দিনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করতে সম হয়। তবে পালিয়ে যায় আলাউদ্দিন।

শনিবার সন্ধ্যার ওই অভিযানে ছিলেন উপপরিদর্শক লিটন মাতুব্বর। তিনি বলেন, বাসায় ঢোকার পরপরই এত অল্প সময়ের মধ্যে আলাউদ্দিন মল নিজের শরীরে মেখে ও ছুড়ে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে নিয়ে গেল। পালিয়ে গেলেও তাকে ধরতে গোয়েন্দা তথ্য নেওয়া হচ্ছে।

অভিযানে অংশ নেওয়া আরেক পুলিশ সদস্য জানান, আলাউদ্দিনের বাসা থেকে ছোট ছোট কাগজে মোড়ানো কয়েকশ প্যাকেট হেরোইন জব্দ করা হয়েছে। গুঁড়া হলুদের প্যাকেটের আড়ালে হেরোইন বিক্রি করা হচ্ছিল। প্যাকেট দেখে কারও বোঝার উপায় নেই ভেতরে হেরোইন। হলুদের গুঁড়ার 'আর এইচ' ব্র্যান্ডের প্যাকেট ব্যবহার করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা গেল, ১০ মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে রয়েছেন সোনিয়া আক্তার। তিনি বলেন, 'আমার স্বামী এমন ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাবে এটা কল্পনা করতে পারিনি। একযুগের বেশি সময় ধরে সে হেরোইন কারবার করে যাচ্ছে। কখনও আবার ট্যাবলেট (ইয়াবা বড়ি) বিক্রি করে। এর আগে কারাগারেও গিয়েছিল। এই পথ না ছাড়ায় স্বামীর ঢাকার সংসার ছেড়ে গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে চলে গেছি। মাদকের লাইন ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে আবার আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর দেখি কোনো পরিবর্তন নেই। কারবারের পাশাপাশি নিজেও হেরোইন সেবন করে। এরপর চেষ্টা করাই বন্ধ করে দিয়েছি।'

স্বামীর কারবারে আপনিও গোপনে সহযোগিতা করছেন কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, 'স্বামী বাসার ভেতরেই হেরোইন কারবার করে- এর দায় এড়াব কীভাবে। কোনো কোনো সময় তাকে সহযোগিতা না করলে মারধর করে। বাধ্য হয়ে মাঝেমাঝে হেরোইন লুকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করি। এর আগে একবার বাসার ভেতরে অভিযান চালিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখন কয়েক মাস কারাগারে ছিলাম।'

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী হেরোইন কারবারি। বিভিন্ন সময় তারা নানা কৌশল নেয়। হাত-পায়ে মল মাখা ও পুলিশের উদ্দেশ্যে হঠাৎ ছুড়ে দেওয়ার কারণে সোনিয়ার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগেও আরেক হেরোইন কারবারি ও হেরোইনসেবীকে গ্রেপ্তারের পর বিপাকে পড়তে হয়। থানার হাজত খানার ভেতরে মলত্যাগ করে অন্য আসামিদের গায়ে মাখিয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি ঘটায়। পরে রাতেও পুরো হাজতখানা ধোয়ামোছা করতে হয়েছে। চিহ্নিত অনেক মাদক কারবারি গ্রেপ্তার এড়াতে এ ধরনের কৌশল নেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad