তাজুল ইসলাম রেজা, সাদুল্লাপুর►
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় পাওনা টাকা নিয়ে সালিশ বৈঠক ভন্ডুলের পর দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় আতঙ্কে মার্কেট ও আশপাশের এলাকার দোকানপাট এবং যানবাহান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় থানায় দুইটি মামলা দায়ের এবং উভয়পক্ষের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলা সদরের সাদুল্লাপুর সরকারি কলেজ রোডের আবু হোসেন সুপার মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সাদুল্লাপুর উপজেলা সদরের ধাপরেহাট রোডের নুর মোহাম্মদ এর ছেলে জাতীয় শ্রমিক লীগের উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ হোসেন লাবলু (৪০) ও নাজমুল ইসলাম (৩০) এবং একই উপজেলার তরফবাজিত গ্রামের মৃত. আফসার আলীর ছেলে মো: আব্দুল হালিম (৩০)।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার হামিন্দপুর গ্রামের অনন্ত মিয়ার ছেলে দুলা মিয়া (৫৫) একই উপজেলার তরফবাজিত গ্রামের নইবর রহমানের ছেলে মো. গনি মিয়া ও বুজরুক পাঠানোছা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে তুলিপের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ধার নেন। পরে দুলা মিয়ার নিকট থেকে সেই টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয় গাইবান্ধা সদরের কুপতলা ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে মঞ্জু মিয়া। এই টাকা নিয়ে গনি মিয়া ও তুলিপের সঙ্গে দুলা ও মঞ্জুর দীর্ঘদিন ধরে দ্বদ্ব চলছিল।
সম্প্রতি সাদুল্লাপুর বহুমূখি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন ধলু ও ওই বিদ্যালয়ে অ্যাডহক কমিটির সদস্য শাহারুল আলম কাজল বিষয়টি সমাধানের জন্য মঞ্জু মিয়ার পক্ষ নিয়ে প্রতিপক্ষ পাওনাদারদের সাথে আলোচনায় বসেন। কিন্তু বৈঠকে সহকারী প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন ধলুকে লাঞ্চিত করা হলে আলোচনা ভন্ডুল হয়ে যায়। পরবর্তীতে শুক্রবার বিকেলে আবু হোসেন সুপার মার্কেটে ওই বিষয়টি সমাধানের জন্য পুনরায় সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু বৈঠকে লাভলু ও তার ছোট ভাই নাজমুল বাগবিতান্ডার এক পর্যায়ে গনি মিয়া ও তুলিপকে লাঞ্চিত করে। এ খবর পেয়ে গনি মিয়া ও তুলিপের লোকজন ঘটনাস্থলে চলে আসলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। এরপর লাভলুর পক্ষের লোকজনও চলে আসে। উভয় পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা হাতে সড়কে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে লাভলুর লোকজন মার্কেটের ভিতরে গিয়ে অবস্থান নেয়। গনি মিয়ার লোকজন মার্কেটের গেট ভেঙে তাদেরকে হামলার চেষ্টা চালায়। অবরুদ্ধ হয়ে পরে লাভলু ও তার লোকজন। আতঙ্কে মার্কেট ও আশপাশের এলাকার দোকানপাঠ বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হয়ে যায় যানবাহান চলাচল।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে গাইবান্ধা থেকে সেনাবাহিনী এসে ফরহাদ হোসেন লাবলু ও নাজমুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। মো. গনি মিয়া জানান, এই বিষয়টি মিমাংসার কথা বলে লাবলু উভয় পক্ষকে শুক্রবার বিকালে আবু হোসেন সুপার মার্কেটে তার ঘরে ডাকেন। ওখানে গেলে লাবলু ওই টাকা থেকে তিন লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে লাবলু ও নাজমুল তাকে মারপিট করে।
জেল-হাজতে থাকায় এ নিয়ে ফরহাদ হোসেন লাবলু বা নাজমুলের সাথে কথা বলা সম্ভব হয় নাই।
এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে মঞ্জু মিয়ার মোবাইল ফেনে যোগাযোগ করা হলে রং নম্বর বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
সাদুল্লাপুর থানার ওসি মো: তাজউদ্দিন খন্দকার জানান, খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ঘটনায় গনি মিয়া বাদি হয়ে একটি ও মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী রঙ্গিলা বেগম বাদি হয়ে থানায় দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। এই দুই মামলায় তিনজনকে আটক করে গাইবান্ধা জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।