Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • ৭ ঘন্টা আগে
  • ৩৬ বার দেখা হয়েছে

গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য করছে কমিউনিটি প্যারামেডিক

গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য করছে কমিউনিটি প্যারামেডিক

নিজস্ব প্রতিবেদক►

বাংলাদেশের কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা এখন বিশ্বে রোল মডেল। গত কয়েক দশকে স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির কয়েকটি সূচকে ভারত, পাকিস্তানসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার অনেক হ্রাস পেয়েছে এবং ক্রমে আরও হ্রাস পাচ্ছে। প্রসূতিসেবার মান বৃদ্ধির ফলে প্রসবকালে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও কমেছে। টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের ফলে কিছু সংক্রামক রোগ, যেমন পোলিও নির্মূল হয়েছে এবং যক্ষ্মা, কলেরা ইত্যাদি রোগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে গ্রামাঞ্চলে কর্মরত কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মো. আবদুল্লাহ গ্রামীণ জনপদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চাকুরী ছেড়ে হয়েছেন একজন কমিউনিটি প্যারামেডিক। এ মানুষটি ২০১৩ সালে কমিউনিটি প্যারামেডিক সার্টিফিকেট নেয়ার পর ২০১৫ থেকে একটানা চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছেন তার উপজেলার মানুষদের। উপজেলার চকচকিয়া, মুক্তিনগর, ধনারুহা এলাকার ২৫-৩০ জন প্রান্তিক মানুষকে আবদুল্লাহ প্রতিদিন সেবা দিয়ে থাকেন। তার এই সেবায় সন্তুষ্ট এলাকার মানুষও।

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নার্সিং এন্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের তত্ত্বাবধায়নে এবং সুইসকন্ট্যাক্ট ‘ASTHA’ প্রকল্পের আওতায় প্রতিবছর তৈরি হচ্ছে শত শত দক্ষ কমিউনিটি প্যারামেডিক। গ্রামীণ এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন এসব কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা।

গ্রামীণ জনপদের প্রান্তিক মানুষগুলো যেখানে এতদিন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, সেখানে ‘ASTHA’ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষিত কমিউনিটি প্যারামেডিকেরা গ্রামীণ অঞ্চলে প্রতিনিয়ত সুলভ মূল্যে চিকিৎসসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। শিশুদের টিকা দেওয়া, গর্ভকালে ও প্রসবের সময় প্রসূতি ও শিশুর সেবা, কিশোর-কিশোরীদের প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া; ডায়রিয়া, কলেরা, কালাজ্বর ইত্যাদি প্রতিরোধ ও নির্মূল করাসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা দিয়ে থাকেন। দেশের জনগোষ্ঠীর একদম তৃণমূল পর্যায়ে তাদের আট ধরনের স্বাস্থ্যসেবার কার্যকারিতা ও সাফল্য বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ও প্রশংসিত হয়েছে।

কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা সাধারণত ঠাণ্ডা, জ্বর, ডায়রিয়ার মতো সাধারণ অসুখের জন্য ওষুধ প্রদান করে থাকে; রোগীর অবস্থা বেগতিক বুঝলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে; কমিউনিটি প্যারামেডিক ও স্বাস্থ্য সহকারী ওষুধ প্রদানের পাশাপাশি কাটাছেঁড়া কিংবা কোথাও ভেঙে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন; বিশেষ প্রয়োজনে রোগীর বাড়ি গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে থাকেন; প্রয়োজনীয় ওষুধ শেষ হয়ে গেলে অনেক সময় জেলা সদর থেকে ওষুধ নিয়ে আসার কাজ করতে হয়।

বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ASTHA’ গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য ও টেকসই করে তুলেছে। তাই বাংলাদেশের এই উদ্যোগটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও একটি অনুকরণীয় মডেল হয়ে উঠছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধায় ২৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর ১ হাজার ২৭০ জন কমিউনিটি প্যারামেডিক কোর্স সম্পন্ন করছেন। কমিউনিটি প্যারামেডিক হতে প্রার্থীদের ন্যূনতম এসএসসি পাশ করতে হবে এবং সরকার অনুমোদিত যেকোনো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দুই বছরব্যাপী প্যারামেডিক কোর্স সম্পন্ন করতে হবে- যার মধ্যে ছয় মাসের হাসপাতাল ইন্টার্নশিপ অন্তর্ভুক্ত। সর্বশেষ নার্সিং কাউন্সিল থেকে প্রাপ্ত লাইসেন্সের মাধ্যমে তারা নিজ এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসসেবা প্রদান করতে পারবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad