নিজস্ব প্রতিবেদক ►
গাইবান্ধায় একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কক্ষে চেয়ারম্যানের দুর্নীতি নিয়ে ইউএনও'র কাছে অভিযোগ করায়, ওই পরিষদের এক ইউপি সদস্যকে সবার সামনে মারপিট করেছে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। এমন ঘটনা ঘটেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুরিদহ ইউনিয়ন পরিষদে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই ইউপি সদস্য বিচার দাবি করে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গত ১০ জুলাই একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান তুলিপ সাঘাটা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হওয়ায় প্রতিটি কাজেই প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মী ইউপি সদস্য নুরুন্নবীর সাথে খারাপ আচরণ করে আসছিলেন। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান তুলিপের বিরুদ্ধে টি আর, কাবিখা, এক পার্সেন্ট ও মসজিদের টাকা আত্নসাতসহ নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য নুরুন্নবী।
এরই জের ধরে গত ২৬ জুন ইউনিয়ন পরিষদে কাবিটা, ভিজিডি কার্ডের বিভিন্ন ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে আলোচনা চলছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে ইউএনওকে অভিযোগ দেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে ইউপি সদস্য নুরুন্নবীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান তুলিপ। এরপর তাকে চর-থাপ্পরসহ এলোপাতাড়ি মারপিট করেন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।
সেদিন চেয়ারম্যানকে থামানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন ঘুরিদহ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব শাহাবুদ্দিন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, 'আমি অসুস্থ মানুষ। প্রথম দফায় চেয়ারম্যান মেম্বার ঘুষাঘুষি অবস্থা। তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়েছে। চেয়ারম্যান ঘুষি তুলেছিল কিন্তু মারেনি। কিছুটা হাতাহাতি হয়েছে। কক্ষ ছেড়ে নুরুন্নবী মেম্বার চলে যাচ্ছিলেন। তখুনি আবার ফেরত এসে চেয়ারম্যান আপনি কি হয়েছেন!, নুরুন্নবী মেম্বার এই কথা বলতেই চেয়ারম্যানের লোকজন মেম্বারকে কয়েকটা চর-থাপ্পর মেরেছে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান তার হাতের আঙুলে ব্যথা পেয়েছেন। এটা মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ'।
ডাক বাংলা মসজিদের এক লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা আত্নসাত করা হয়েছে বলতেই ওরা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুন্নবী বেপারী। সেদিনের ঘটনার বর্ননা গিয়ে তিনি বলেন, 'প্রথম থেকেই তিনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আসছিলেন। ইউনিয়নের বিভিন্ন কাজের অনিয়ম তুলে ধরে ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেই। সে কারণে পরিষদের চেয়ারম্যান কক্ষে সবার সামনে আমাকে মারধর করা হয়। আমি এ ঘটনায় ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের বিচার দাবি করছি'।
এদিকে ইউপি সদস্য নুরুন্নবী বেপারীকে পেটানোর বিষয়টি তার এলাকায় জানাজানি হলে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন এলাকাবাসী। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান তুলিপ। এদিন সমাবেশ চলাকালে সাবু নামের একজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই তার হাত ধরে রাখেন এবং এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন চেয়ারম্যানের লোকজন। এতে গুরুতর আহত হন সাবু। এমনকি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অপরাধে আরেক ব্যক্তি মিঠুকেও মারপিট করেন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।
এদিকে আওয়ামী লীগ কর্মী ও ইউপি সদস্যকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মোখলেস বলেন, 'ঘুরিদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুলিপ আমাদের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য নুরুন্নবী বেপারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে উপজেলা প্রশাসনের কাছে চেয়ারম্যানসহ এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি'।
এসব নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘুরিদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাঘাটা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেলিম আহম্মেদ তুলিপ বলেন, তিনি নন, তার অনুসারী মেম্বাররা তাকে মেরেছেন বলে মারপিটের বিষয়টি স্বীকার করেন।
বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান তুলিপ ও তার লোকজন কতৃক আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য নুরুন্নবীকে মারধরের তীব্র নিন্দা জানান সাঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, 'পরিষদের কক্ষে ইউপি সদস্যর শরীরে হাত তোলা অত্যন্ত ঘৃণিত অপরাধ। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবি করছি'।
এ ব্যাপারে সদ্য যোগদান করা সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসাহাক আলী বলেন, 'এটা একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ঘটনা সত্যি হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে'।