রংপুর সংবাদদাতা ►
তিস্তা আজ মৃতপ্রায়। নদীটির বুকজুড়ে খরস্রোতা জলের ধারা আর নেই। তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর। হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য। নদীর গভীরতা না থাকায় বর্ষায় তিস্তাপাড়ে দেখা দেয় বন্যা। পানির ন্যায্য হিস্যা না পেয়ে তিস্তা এখন উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহার করছে। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত সান্ত্বনা ছাড়া কিছুই জোটেনি। উজানে ভারত সরকার ব্যারাজ (বাঁধ) নির্মাণ করে তিস্তার স্বাভাবিক প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বাংলাদেশে এই নদী শুকিয়ে এখন মৃতপ্রায়। নদীর ওপর নীলফামারী ও লালমনিরহাটের ডালিয়া ও দোয়ানীতে নির্মিত তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে কৃষিজমিতে যে সেচ দেওয়ার কথা, তাও অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে ভয়াবহ পানি সংকটের শঙ্কা নিয়ে চলতি বোরো মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৫ জানুয়ারি। ব্যারাজ কর্তৃপ বলছে, এবারও তিস্তার পানি দিয়ে শতভাগ সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না। ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের কথা থাকলেও এ বছর সেচ দেওয়ার ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার হেক্টরে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, তিস্তা নদী নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীর ভেতর দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ১৯৭৭ সালে তিস্তার ওপর ব্যারাজ, হেড রেগুলেটর ও কোজার ড্যাম তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার। বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপরে নজরে গেলে গজলডোবায় (বাংলাদেশ থেকে ৬৩ কিলোমিটার উজানে) তারা ব্যারাজ নির্মাণ করে, যার মাধ্যমে ভারত তিস্তার মোট পানিপ্রবাহের ৮০ শতাংশ নিয়ে তাদের কৃষিজমিতে সেচ প্রদান করছে।
পাউবোর ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা জানান, উদ্বৃত্ত ২০ শতাংশ পানি ভারত ভাটিতে ছাড়লেও ৬৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে এই স্রোতধারা বাংলাদেশের দোয়ানীতে ব্যারাজ এলাকার পথে একেবারেই ীণ হয়ে যায়। ফলে ব্যারাজের ভাটিতে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হচ্ছে তিস্তা।