ট্রেনের টিকিট কালোবাজারী ৬ ও ৩ মাদক বিক্রেতা গ্রেপ্তার

শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী ► র্যাব-১৩ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পৃথক পৃথক ঘটনায় ৩ জন মাদক ব্যবসায়ী ও ৬ জন রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে মোট ২ হাজার ৬৭ বোতল ফেন্সিডিল এবং সাড়ে ১১ কেজি গাঁজাসহ নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায় চালানো এসব অভিযানে গ্রেপ্তার আসামীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে র্যাব-১৩ রংপুর কার্যালয় থেকে প্রেরিত এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে। মাদকের কালো থাবায় আক্রান্ত সারা বিশ্ব। মাদকের বিস্তার এখন শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। এর বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের অমিত সম্ভাবনাকে। মূল্যবোধের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা এবং নানাবিধ হতাশার সুযোগ নিয়ে মাদক তার কালো হাত প্রসারিত করেছে তরুণ সমাজের প্রতি। নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তাার হয় সহজেই। রংপুর বিভাগের জেলা সমূহে মাদকের বিস্তার অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম। তা সত্বেও গত কিছুদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিছু দুষ্টু চক্র এর ব্যাপকতা বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে। তাই নির্বাচন পরবর্তী সময়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১৩ মাদক বিরোধী অভিযানে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘন্টায় র্যাব-১৩ এর ব্যাটালিয়ান সদর, রংপুর, সিপিসি-১, দিনাজপুর এবং সিপিসি-২, নীলফামারী চারটি উল্লেখযোগ্য সফল অপারেশন করেছে। এর মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারী রাত আনুমানিক ২ টা ৫০ মিনিটে র্যাব-১৩, সদর দপ্তর রংপুর এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লালমনিরহাট জেলায় অভিযান পরিচালনা করে। জেলার আদিতমারী উপজেলা সদরের গিরিজা শংকর মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে বুড়িমারি টু রংপুরগামী মহাসড়কের উপর চেকপোষ্ট করাকালীন সন্দেহের ভিত্তিতে একটি ট্রাক চেক করে। এসময় ১৮৭ বোতল ফেন্সিডিলসহ আসামী মোঃ নবিয়ার হোসেন (৩০) কে আটক করে। সে আদিতমারি উপজেলার দুরাকুটি গ্রামের মোঃ তোতা মিয়ার ছেলে। এই ঘটনায় ট্রাকটিও জব্দ করা হয়। একই দিন সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০ টঅয় রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার বড় রুপাই গ্রামে নিজ বসত বাড়ির থেকে সাড়ে ১১ কেজি গাঁজাসহ মোঃ রবিউল কে গ্রেপ্তার করা হয়। সে ওই এলাকার মৃত নাজির হোসেনের ছেলে। অপর একটি অভিযানে সিপিসি-২, নীলফামারীর একটি অভিযানিক দল সকাল আনুমানিক ৬ টা ২০ মিনিটে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মালগাড়া গ্রামের তুষ্ট চন্দ্র বর্মনের বসত বাড়িতে একটা শোবার ঘরের খাটের নিচ হতে ১ হাজার ৮৮০ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় তুষ্ট চন্দ্র বর্মনের ছেলে পুষ্প চঁন্দ্র বর্মন (৩৮) ও তার সহযোগী একই এলাকার গোড়ল গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে মো. গোলাম মোস্তফা কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি দেশে আটককৃত ফেন্সিটিলের স্মরণকালের অন্যতম বড় চালান বলে জানিয়েছে র্যাব। অন্যদিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ১০ টা হতে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত র্যাব-১৩, সিপিসি-১, দিনাজপুর এর একটি আভিযানিক দল এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শামছুজ্জামান আসিফ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়, ঠাকুরগাঁও কর্তৃক যৌথভাবে ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনের সামনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এসময় আসামী রিয়াদ এর কম্পিউটারের দোকানের ভিতর হতে ট্রেনের টিকিট জালিয়াতি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো ঠাকুরগাঁও সদরের ছিট চিলারং এলাকার গনি আহমেদের ছেলে মোঃ ফিরোজ (২৮), মোঃ ইদ্রিশ আলীর ছেলে মোঃ সুমন (২৮) ও মোঃ রুস্তম আলীর ছেলে মোঃ রিয়াদ হাসেন (২৮) এবং ইসলামনগর এলাকার মোঃ আইনুলের ছেলে মোঃ লাবু (২৮), মোঃ জিয়ার ছেলে মোঃ সোহরাব (২৬) ও মো. আইনুলের ছেলে মোঃ লাজু (২৫) কে গ্রেফতার করা হয়। এদের কাছ থেকে জালিয়াতি কাজে ব্যবহৃত ১টি কম্পিউটার, ৫ টি এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট বিক্রয়লব্ধ নগদ ৩ হাজার ৮২৫ টাকা উদ্ধার করা হয়। এই আসামীরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ ট্রেনের টিকিট জালিয়াতি করে আসছে। তারা কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে অত্যন্ত সুকৌশলে প্রতিটি ট্রেনের বিপুল সংখ্যক সিট কোন অর্থ পেমেন্ট ছাড়াই বুকিং করে রাখে। ফলে ট্রেনের টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। সাধারণ যাত্রীরা অনলাইনে বা টিকিট কাউন্টারে টিকিট ক্রয় করতে গেলে ক্রেতা এবং টিকিট কাউন্টার স্টাফ দেখতে পায় সকল টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। পরবর্তিতে যাত্রীরা দালালের মাধ্যমে উক্ত জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বুকিং করে রাখা সীটের আসল অনলাইন টিকিটের মতই নকল টিকিট উক্ত ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে তৈরী করে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই যাত্রীদের নিকট বিক্রি করে। ফলে যাত্রীরা বুঝতে পারে না উক্ত টিকিট টি নকল। তবে যাত্রীরা নিরাপদেই রেলভ্রমন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন করলেও জালিয়াতি চক্রের কৃত্রিমভাবে বুকিং করে রাখা সীটগুলোর বিপুল পরিমান ভাড়ার অর্থ বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিকটে না গিয়ে জালিয়াতি চক্রের পকেটে চলে যায়। ভ্রাম্যমান আদালত শাস্তি হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের মধ্যে মোঃ ফিরোজ (২৮), মোঃ লাবু (২৮), মোঃ সুমন (২৮), মোঃ সোহরাব (২৬) ও মোঃ রিয়াদ হাসেন (২৮) কে ১৫ দিনের এবং মোঃ লাজু (২৫) কে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করে। পরে তাদের কে ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় কারাগারে হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাব-১৩ এর অধিনায়কের পক্ষে উপ-পরিচালক (মিডিয়া) স্কোয়াড্রন লীডার মাহমুদ বশির আহমেদ জানান, রংপুর বিভাগের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং মাদকের কালো থাবা থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে র্যাব-১৩ বদ্ধপরিকর। মাদকসহ এই বিভাগের জঙ্গি নির্মূল অভিযান ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে র্যাবের সক্রিয় অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও জানান, মাদক সহ গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারি, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া, লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ থানায় র্যাব বাদী হয়ে তিনটি মাদক মামলা রুজু করেছে এবং আসামীদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান।
নিউজটি শেয়ার করুন