ভবতোষ রায় মনা ►
জয়িতাদের অর্জন এবং সমাজের উদ্যোগী নারীদের কর্মকান্ডকে আরও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এসকেএস ফাউণ্ডেশন ২৭ জন জয়িতা নারীকে সংবর্ধনা প্রদান করেছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জয়িতাদের হাতে স্বীকৃতিস্বরূপ প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকার চেক, তাদের জীবন কথা নিয়ে লেখা বই 'আমাদের জয়িতারা'-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুর আরা বেগম গিনি এমপি বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনে করেছিলেন দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারী উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তিনি নারী উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে নারীদের মর্যাদা দান করে প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার দেখানো পথে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষে প্রধানমন্ত্রী নানা কৌশল ও নীতি প্রণয়ন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ খ্রিস্টাব্দে জয়িতা সম্মাননা প্রদান প্রথম শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফলে আজ নারীরা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছে। সর্বক্ষেতে নারীরা এগিয়ে এসেছে। কিছুক্ষেত্রে পুরুষের চেয়েও নারীরা বেশি সাফল্য অর্জন করেছে।’
গিনি এমপি বলেন, যারা জয় করে এসেছে তারাই তো জয়িতা। নারীরা নির্যাতন সহ্য করে সংসার করছে। কিন্তু বর্তমানে কিছুটা ব্যত্য়য় ঘটছে। এখন নারীরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরে নারীদের সাফল্যের কারণে আজ তারা স্বাবলম্বী হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে আজকে হয়তো ২৭ জন জয়িতা নারীকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে আরও ব্যাপক পরিসরে জয়িতাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করার অনুরোধ জানান এসকেএস ফাউণ্ডেশন কর্তৃপক্ষকে।
আজ সোমবার সকালে এসকেএস ইন হল রুমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার 'জয়িতা অন্বেষণ বাংলাদেশ' শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্থানীয় বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান এসকেএস ফাউণ্ডেশন।
অনুষ্ঠানে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোছা: সাহারা বেগম, আসমা বেগম, মোছা: রুপালী বেগম, সাঘাটা উপজেলার লিপি বেগম, মোছা: শাপলা বেগম, মোছা: বুলবুলি বেগম, মোছা: ঝর্ণা বেগম, মৌসুমী বেগম, ফুলছড়ি উপজেলার বেলী বেগম, মোছা: মন্জুয়ারা বেগম, ইয়ারন বেগম, মোছা: লাইলী বেগম, মোছা: জোবেদা বেগম, মোছা: সালেহা বেগম. মোছা: লুৎফা বেগম, মোছা: সালেকা বেগম, সুন্দরগঞ্জ উপেজলার মোছা: শাহিনুর খাতুন, মোসলেমা বেগম, রেখা আক্তার কাজল, মোছা: রোজিনা বেগম, ফাতেমা বেগম, লালমনিরহাট সদর উপজেলার অজিফা বেগম, শান্তনা রাণী ও মিনারা বেগম।
এই ২৭ জন জয়িতা ৪টি ক্যাটাগরিতে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দŧাড়িয়েছে যে নারী-এ ক্যাটাগরিতে ৯ জন, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে ৫ জন, সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছে যে নারী ক্যাটাগরিতে ১২ জন এবং সফল জননী ক্যাটাগরিতে ১ জন জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ জন লালমনিরহাট জেলারসহ মোট ২৭ নারী জয়িতা তাদের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
এসকেএস ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা রাসেল আহম্মেদ লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোধ ফজলুল হক, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নার্গিস জাহান। অনুষ্ঠানে মুলপ্রবন্ধ পাঠ করেন এসকেএস ফাউণ্ডেশনের অ্যাডভোকেসি এ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক যোসেফ হালদার। এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা প্রেসক্লাব সভাপতি কেএম রেজাউল হক, এসকেএস স্কুল এ্যান্ড কলেজের উপাধাক্ষ্য ডা. অনামিকা সাহা, সদর উপজেলার বোয়ালী ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম সাবু, সাঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট, ফুলছড়ির উড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামাল পাশা, সাংবাদিক বিপ্লব ইসলাম, জয়িতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লালমনিরহাটের শান্তনা রাণী, গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহানা বেগম, ফুলছড়ির মন্জুয়ারা বেগম।
এসকেএস ফাউণ্ডেশনের নির্বাহী প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা রাসেল আহম্মেদ লিটন বলেন, ‘আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী। তাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে, আবার নির্যাতনের পরিমাণও বাড়ছে। এই নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। আর এটা বন্ধ করতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনও নারী যদি নির্যাতিত হয়, তখন তাৎণিকভাবে তার ব্যবস্থা নিতে পারলেই নারী নির্যাতন বন্ধ হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সমাজের নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অন্ধকার কাটিয়ে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পথ প্রদর্শক হিসেবে সামনে থেকে আলো দেখাচ্ছেন জয়িতারা। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজেরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন এবং সব নারীকে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছেন। তাদের কেউই দমাতে পারবে না। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিগণ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণ, গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ।