সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর ►
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করে বাজিমাত করেছেন তরুণ দুই উদ্যোক্তা। দুই উদ্যোক্তা পৃথকভাবে এক একর ও এক বিঘা জমিতে দার্জিলিং, চায়না থ্রি, মান্দারিন জাতের কমলা চাষ করেছেন। তবে একজন অপরজনের নিকট পরামর্শ করেই এই কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে সফল হয়েছেন। এখন এই তরুণ দুই উদ্যোক্তা এলাকার অনেক যুবকের আইডল হিসেবে পরিচিত পাচ্ছে। দিনাজপুরের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সমতল মাটিতে এ বছর কমলার বাম্পার ফলন এসেছে। কমলার রং আকৃতি ও সুমিষ্ট-রসালো হওয়ায় কমলা কিনতে বাগানে ভিড় দেখা গেছে ক্রেতাদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানা বিধ বাধা পেরিয়ে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ নিয়েই তারা কমলা চাষ শুরু করেন। প্রত্যাশার চাইতে এ বছর ফলন বেশি হওয়ায় অপার লাভের সম্ভাবনা দেখছেন এই দুই কৃষি উদ্যোক্তা। ঘোড়াঘাট উপজেলা নুরজাহানপুর এলাকায় জাহাঙ্গীর আলম প্রায় ১ বিঘা জমিতে এবং উপজেলার নিতাইশা মোড় এলাকায় বদরুল আলম বুলু প্রায় ১একর জমি জুড়ে কমলার চারা রোপন করেন। প্রায় তিন বছর আগে দেশের বিভিন্ন স্থান ও দেশের বাহিরে থেকে পরীক্ষামূলক ৭ প্রকার চারা এনে রোপন করেন এই দুই উদ্যোক্তা। ৭ প্রকার জাতের মধ্যে দার্জিলিং ও চায়না থ্রি ফলন ভালো হয়েছে বলে জানায় তারা।
এরপর নিজেরাই চারা উৎপাদনের মাধ্যমে বাড়িয়েছেন বাগানের পরিসর। রোপনকৃত প্রতিটি গাছে ২০-২৫ কেজি কমলা ধরেছে যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলের ফল সমতল ভূমিতে উৎপাদন হাওয়ায় মনোমুগ্ধকর এই কমলা বাগান দেখতে ছুটে আসছেন অনেক দর্শনার্থী। সমতল ভূমিতে কমলা টক হয় সে ধারণা পাল্টে গেছে দর্শনার্থীদের।
লক্ষ্য করা যায়, বাগানে দর্শনার্থী ও ফল ক্রেতা এবং চারা ক্রেতার উপচে পড়া ভীড়। দূর থেকেই চোখে পড়ে, বাগানে গাছে গাছে থোকায় থোকায় হলুদ ও সবুজ বর্ণের কমলা নুয়ে পড়েছে মাটিতে। গাছ আকারে ছোট হওয়ায় ও ফল সুমিষ্ট ও নুয়ে পড়ায় শিশুরাও বেশ আনন্দের সাথে নিজের পছন্দমত কমলা ছিড়ে খাচ্ছেন।
দর্শনার্থী রফিকুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের ফল সমতল ভূমিতে হচ্ছে এটা অনেক আনন্দের। আমরা ফল খেয়ে দেখলাম সুমিষ্ট তাই চারা নিতে এসেছি। বসতবাড়ির পতিত জমি এবং বাড়ির ছাদে রোপন করতে। উদ্যোক্তা বদরুল আলম বুলু বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখে ও কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে দার্জিলিং এবং চায়না থ্রি কমলা চাষে উদ্যোগী হই। এ বছর তুলনায় অনেক ভালো ফলন হয়েছে। উৎপাদনের প্রথম বছরেই দু-তিনটি কমলা এক কেজি পরিমাণ ওজনের হয়েছে।
উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের দেশের পতিত অনেক জায়গা রয়েছে। এই সকল পতিত জমিতে চারা রোপন করে পরিচর্যা ঠিকমত করতে পারলে দেশের বাইরে থেকে আনা কমলার যে গুণগত মান তার থেকে আমাদের দেশের কমলার গুণগত মান সেরা হবে ও লাভবান হতে পারবে এবং বেকারত্ব কমে আসবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো: রফিকুজ্জামান বলেন, উপজেলায় সাইট্রাস জাতীয় ফলে চাষ দিন দিন বাড়ছে। কারণ হিসেবে বলা যায় এই ফলের রোগবালাই কম। আমরা সব সময় কৃষকদের রোগ বালাই সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সাইট্রাস ফসলে অনেক লাভ। এই জন্য কৃষকরা এই ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।