Ad
  • মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৭-৬-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৩:২৭

গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে কৃষক সমিতি’র কৃষকবন্ধন অনুষ্ঠিত

গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে কৃষক সমিতি’র কৃষকবন্ধন অনুষ্ঠিত

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ►

আজ ১৭ জুন শনিবার বাংলাদেশ কৃষক সমিতির ডাকে পঞ্চগড় থেকে যমুনা সেতু ও চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে একযোগে সকাল ১১টা-১২টা কৃষকবন্ধন কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে শতশত কৃষক-জনতার অংশগ্রহণে কৃষকবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গোবিন্দগঞ্জের কৃষকবন্ধনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি প্রবীণ কৃষকনেতা বিপ্লব চাকী, প্রবীণ কৃষকনেতা  তাজুল ইসলাম, জেলা কৃষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মাস্টার, কৃষক নেতা সন্তোষ বর্মন, সিপিবি নেতা অশোক আগরওয়ালা, আল মামুন মোবারক, যজ্ঞেশ্বর বর্মন, কৃষকনেতা রেজাউল করিম রঞ্জু প্রমুখ। পলাশবাড়ীর কৃষকবন্ধনে বক্তব্য রাখেন কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি ছাদেকুল ইসলাম মাস্টার, জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি প্রবীণ কৃষকনেতা সুভাষ শাহ রায়, গাইবান্ধা জেলা সিপিবির সহকারি সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মুরাদ জামান রব্বানী, কৃষকনেতা আদিল নান্নু, জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল, যুব নেতা রানু সরকার, ছাত্র নেতা ওয়ারেছ সরকার প্রমুখ।

উল্লেখ্য বরেন্দ্র অঞ্চলসহ সারাদেশে কৃষি সেঁচে অনিয়ম, হয়রানি, দুর্নীতি বন্ধ, সময়মতো চাহিদা মতো ন্যায্য দামে সেঁচের পানি বিতরণ নিশ্চিত করা, সারসহ সকল প্রকার কৃষি উপকরণের দাম কমানো, নূন্যতম ১৫০০ টাকা মণ দরে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়, প্রকৃত কৃষককে কৃষি কার্ড দেয়া, শস্য বীমা ও পল্লী রেশন চালু ইত্যাদি দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 

 কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদ হোসেন খান বলেন আজ আমরা সরকার উৎখাতের ডাক নিয়ে  এখানে কৃষকবন্ধনে আসি নাই বা এই সরকার হটিয়ে অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতেও আসিনি, আমরা এসেছি দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগানদাতা কৃষকের সমস্যার কথা তুলে ধরতে, কৃষকের দাবি আদায়ে আপনাদের সমর্থন নিতে। আপনারা জানেন বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানি নিয়ে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি-লুটপাট, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ। শোষণ-জুলুম-অত্যাচারে কৃষকরা দিশাহারা, এরমধ্যে আদিবাসী কৃষকের দুরাবস্থা অকল্পনীয়, গতবছর রাজশাহীতে  দু'জন আদিবাসী কৃষক ক্ষোভে, দু:খে, অপমানে আত্মহত্যা করেছে। সেচের পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে অপারেটররা কোন নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করে না। চাষিরা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য পরিশোধ করেও সময়মত চাহিদা অনুসারে সেচের পানি পায় না। ক্ষেতে পানি না থাকায় কীটনাশক ব্যবহার করতে পারে না, পানির অভাবে ধানের কাংখিত ফলন পায় না। কাজেই সেচের পানি নিয়ে দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ করতে হবে।

অন্যদিকে কৃষি  উপকরণ নিয়ে চলছে দেশী-বিদেশী কোম্পানির অবাধ লুটপাট। কৃষকদের কাছ থেকে  প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য নেয়া হচ্ছে, ফলে উৎপাদন ব্যয় যে পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে সে তুলনায় ফসলের দাম পাচ্ছে না কৃষক, সরকার ধানের দাম মণপ্রতি ১২০০/-টাকা ধার্য্য করেছে, এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমরা উৎপাদন খরচ বিবেচনায় এবছর ধানের দাম মণপ্রতি ১৫০০/-টাকা দাবি করছি। আরও দাবি করছি- কৃষি উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যে দিতে হবে, খোদ কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে, পল্লী রেশন ও শস্যবীমা চালু করতে হবে, প্রকৃত কৃষককে কৃষি কার্ড দিতে হবে। 

অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন- আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমান সরকার কৃষকের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, গত এক বছরে সমস্ত কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে, সার, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে ফলে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে জনজীবন দুর্বিষহ করে ফেলেছে। 

সরকারের এসব সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে আমরা কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ পরাধীন দেশে বাস করছি, দখলদার বৃটিশ বেনিয়া ও পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের মতোই বর্তমান সরকারের দ্বারা দেশের জনগণ আজ শোষিত নিষ্পেষিত হচ্ছে। দেশে উন্নয়নের ধোঁয়া তুলে মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে, এতে কৃষিজমি, বনভূমি, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, জীব-বৈচিত্র ধ্বংস হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, দেশ ক্রমান্বয়ে মানুষের বসবাসের উপযোগীতা হারাচ্ছে।

সরকার জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করে না, তারা দেশী-বিদেশী লুটেরাদের স্বার্থে দেশ চালাচ্ছে। আজ অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলো, এখনো আমরা কৃষিপ্রধান দেশে কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ, যন্ত্রপাতি ও সারের জন্য বিদেশিদের মুখাপেক্ষী। দেশে জনগণের অর্থে নির্মিত সারকারখানা গুলো বসিয়ে রেখে লুটেরাদের স্বার্থে চড়াদামে  সার আমদানি করা হচ্ছে, আর এরজন্য খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষকে। আমরা আরও দাবি করছি- কৃষি, কৃষক ও জনগণের স্বার্থে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম কমাতে হবে। ফসলের লাভজনক দাম দিতে হবে, পল্লীরেশন, গণবন্টন ব্যবস্থা ও শস্যবীমা  চালু করতে হবে। প্রত্যেক কৃষককে কৃষিকার্ড দিতে হবে। 

সরকার আমাদের কথা শুনে না, তারা দেশী-বিদেশী লুটেরাদের কথা শুনে কারণ এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না, জনগণের কাছে সরকার দায়বদ্ধ না। আমাদের দুর্ভাগ্য ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ নারীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে  স্বাধীন দেশ আজ দেশী-বিদেশী লুটেরার কথায় চলে, দেশে অনুসৃত তথাকথিত নয়া উদার অর্থনীতিই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তাই আজ দেশের কৃষি, কৃষক ও দেশের আপামর জনগণের দাবি আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রামের বিকল্প নেই, আর আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য চাই শক্তিশালী কৃষক সংগঠন।

নেতৃবৃন্দ বলেন- বাংলাদেশ কৃষক সমিতির রয়েছে শত সংগ্রামের ঐতিহ্য, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাসন শোষণ জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস। তাই এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের হাতকে শক্তিশালী করে  আগামী দিনের লড়াইয়ে সামিল হয়ে দাবি আদায় করতে হবে।
 

নিউজটি শেয়ার করুন

Ad

এ জাতীয় আরো খবর
Ad
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Ad