সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি ►
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ব্যস্ততম শহীদ তুলশীরাম সড়কের (টি আর রোড) ওপর বসানো ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যূতিক ভ্রাম্যমান ট্রান্সফরমারটি একমাসেও সরানো হয়নি। গত ৭ জুন ট্রান্সফরমাটি বসানোর পর থেকে এই সড়কটি দিয়ে পথচারী ও যানবাহনের চালকরা আতঙ্কে নিয়ে চলাচল করছে। যে কোন সময় ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।
জানা গেছে, উত্তর জনপদের অন্যতম বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুর। এ শহরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে শহীদ তুলশীরাম সড়ক (টিআর রোড)। এই সড়কে সৈয়দপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি, ইসলামী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক-বীমার কার্যালয়, উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়, অনেকগুলো ইলেকট্রনিকস্ শো-রুম, নিউ শাহজালাল হোটেল ও নাটোর দই ঘরের মতো হোটেল রেঁস্তোরা রয়েছে।
এছাড়াও এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে হয় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, সৈয়দপুর সরকারি কলেজ, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতাল, পৌরসভা কার্যালয়, পৌর কমিউনিটি সেন্টার, বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়, সামাজিক বনায়ন ও নার্সারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় শ্মশান, কেন্দ্রীয় মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে।
আর পশ্চিম দিক থেকে সৈয়দপুর শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কই এটি। এখানেই সদর পুলিশ ফাঁড়ির পাশে শহীদ ডা. বদিউজ্জামান মার্কেট। ওই মার্কেটের বিপরীতে রয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এই স্ট্যান্ডের ঠিক সামনেই নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) ১১ হাজার ভোল্টের একটি ট্রান্সফরমা রয়েছে।
গত ৭ জুন ওই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমাটি আকস্মিক পুড়ে গিয়ে বিকল হয়। এ অবস্থায় নেকসো'র সৈয়দপুর বিদ্যূৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সেখানে একটি ভ্রাম্যমান ট্রান্সফরমা স্থাপন করে। মূলতঃ ওই এলাকায় বিদ্যূৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভ্রাম্যমান ট্রান্সফরমাটি বসানো হয়।
নেসকো'র একটি সূত্রে জানা গেছে, যে কোন স্থানে বৈদ্যূতিক খুঁটিতে থাকা স্থায়ী ট্রান্সফরমা বিকল হলে সেখানে ভ্রাম্যমান ট্রান্সফরমা লাগানো হয়। পরবর্তীতে বিকল বৈদ্যূতিক ট্রান্সফরমা মেরামত সাপেক্ষে কিংবা নতুন ট্রান্সফরমা বসিয়ে ভ্রাম্যমান ট্রান্সফরমা সরিয়ে নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কে বৈদ্যূতিক খুঁটিতে থাকা ট্রান্সফরমাটি বিকল হলে সেখানে ভ্রাম্যমান ট্রান্সফরমাটি বসানো হয়েছে।
কিন্তু শহীদ তুলশীরাম সড়কে শহীদ ডা. বদিউজ্জামান মার্কেটের সামনে সড়কের ওপর ভ্রাম্যমান ট্রান্সফরমাটি বসানোর এক মাস পেরিয়ে গেলেও সেটি সরিয়ে নেয়া হয়নি অদ্যাবধি। ট্রলির মতো দেখতে দুই চাকা বিশিস্ট একটি লোহার খাঁচায় রাখা ট্রান্সফরমাটির খাঁচার গায়ে স্টিলের প্লেটে ইংরেজিতে ডেইঞ্জার (বিপদজ্জনক) ও ১১,০০০ ভোল্ট লেখা রয়েছে। আর বিপদজ্জনক বুঝাতে সেটির দুই পাশে দুইটি লাল কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, এটি ব্যস্ততম সড়ক। পশ্চিম দিয়ে থেকে সৈয়দপুর শহরে প্রবেশের এটিই একমাত্র পথ। এই পথে দিনে রাতে চব্বিশ ঘন্টায় বিভিন্ন রকম যানবাহন চলাচল করে। এসবের মধ্যে রয়েছে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা, চার্জার রিকশাভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ, কার্ভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও দূরপাল্লার দিবা ও নৈশকোচ। অথচ এক মাস যাবৎ এই ব্যস্ততম সড়কের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ট্রান্সফরমাটি বসিয়ে রাখা হয়েছে।
চার্জার রিকশা ভ্যান চালকরা জানান, এ সড়কে একাধিক কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস। সেগুলোর মালামাল ও যাত্রী আনা নেয়া করতে দিনে রাতে অসংখ্য বার এই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সড়কের ওপর বৈদ্যূতিক ট্রান্সফরমাটি থাকায় ভয় হয়। আতঙ্কে আছি কখন কে যে মারাত্মক দূর্ঘটনায় পড়েন।
নেসকো'র সৈয়দপুর বিদ্যূৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, বিকল ট্রান্সফরমাটির বিপরীতে এখনও নতুন ট্রান্সফরমা বরাদ্দ মেলেনি। তবে দ্রুতই নতুন ট্রান্সফরমা বরাদ্দ মিলবে বলে জানান তিনি। আর তখন ভ্রাম্যমান ট্রান্সফরমাটি সরিয়ে নেয়া হবে। কবে নাগাদ নতুন ট্রান্সফরমা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।