• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১-১০-২০২৩, সময়ঃ রাত ০৭:২২

“ভাঙনের শব্দ শুনলে মোর ঘুম হয় না বাহে!”



সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি

এই বার শমেত ৬ বার ভাঙছে মোর বসতভিটা। এখন মানষের জমিত ঘর তুলি আছম। আজ এক মাস থাকি রাইতোত ঘুমবার পাম না। কখন বা মোর ঘর নদীত চলি যায়। সরকার তো নদীর চরত মেলা ঘর তুলি দিছে। যদি ৬ মাসত ২ বার ঘর ভাঙা নাগে, তাইলে ঘর দিয়ে লাভ কি। হ্যামার দরকার যাতে নদী না ভাঙে। এই বালুর বস্তা দিয়ে কি মোর ঘর রক্ষা হবে বাহে। 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কারেন্ট বাজার গ্রামের ৬০ বছর বয়সের বৃদ্ধ সোলেমান মিয়া আবেগের ভারে এই প্রতিবেদককে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। নদীর ভাঙন আর ঘরের দুরত্ব প্রায় ৫ হাত। এই অবস্থায় কমপক্ষে ১০০ পরিবারের বসতভিটা। পানির কল কল শব্দে সোলেমানের মত অনেকের ঘুম নেই বললে চলে। 

ভাঙন আতঙ্কে নদী পারের মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কখন তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হবে তা নিয়ে। গোটা বছর নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সরকারি ভাবে নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হলেও তা দিয়ে ভাঙন রোধ সম্ভাব হচ্ছে না। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ করার দাবি জানান নদী পারের মানুষ।

উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে প্রতিবছর কমপক্ষে ২০০ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি এবং ২০০ হেক্টর ফসলি জমি তিস্তায় বিলিন হয়ে যায়। গত ৫ বছরে কমপক্ষে আড়াই হাজার পরিবারের বসতভিটা  এবং এক হাজার হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। কারেন্ট বাজার গ্রামের সোলেমানের মত শতাধিক মানুষের বসতভিটা কমপক্ষে ৫ হতে ৮ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার হরিপুর, চন্ডিপুর , শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন  চরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরকারি ভাবে ভাঙন রোধে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা দিয়ে ভাঙন রক্ষা করা সম্ভাব হচ্ছে না। 

হরিপুরের কাশিম বাজার গ্রামের স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও টিউব ফেলছে। কিন্তু তা দিয়ে ভাঙন রোধ হচ্ছে না। স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধে ,নদী খনন, ড্রেজিং, শাসন, সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে ভাঙন রোধ করা যাবে না। 

কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনজু মিয়ার ভাষ্য, সারা বছর নদী ভাঙন চলমান থাকে। পানি কমলে উজানে আর পানি বাড়লে ভাটিতে ভাঙন দেখা দেয়। বর্তমানে উজানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডলের দেয়া তথ্যমতে প্রতিবছর গড়ে ২০০ হতে ২৫০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। পাশাপাশি আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট নদীতে বিলিন হয়। 

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউয়িনের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন রোধে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ওই এলাকায় স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে সরকারের বেরি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।