- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ১১-২-২০২৫, সময়ঃ সকাল ১১:০৮
১৩ বছর পরেও সাগর-রুনি হত্যা রহস্যই রয়ে গেল
মাধুকর ডেস্ক►
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের আরও এক বছর পার হলো আজ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। কিন্তু ১৩ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। রহস্য রয়েছে একই তিমিরে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন নতুন তারিখ ধার্য হচ্ছে।
সাগর সরওয়ার মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক এবং তাঁর স্ত্রী মেহেরুন রুনি ছিলেন এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। ২০১২ সালের এদিন রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন এই দম্পতি। এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১১৫ বার। আগামী ২ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।
সাগর-রুনি হত্যার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটনের এবং খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ, পরে ডিবি দুই মাস এবং সর্বশেষ ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে র্যাব প্রায় সাড়ে ১২ বছর তদন্ত করেও রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এখনো অজানাই থেকে গেছে, তাঁদের খুনি কে বা কারা, কেন খুন হয়েছেন।
অবশ্য গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ২৩ অক্টোবর পিবিআইপ্রধানকে নিয়ে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করারও নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআই এরই মধ্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই মামলায় কারাগারে থাকা পাঁচজনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পিবিআইপ্রধান মোস্তফা কামাল জানান, খুব দ্রুত এই হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তাঁর আশা, দ্রুতই রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।
র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা ২০২২ সালের ৫ অক্টোবর মামলার তদন্তের সর্বশেষ একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁদের পাঁচজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
মামলার নথিতে দেখা যায়, ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হলেও কোনো তথ্য উদ্ধার হয়নি। এ মামলায় কয়েক বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তানভীর রহমান, পলাশ রুদ্র পাল ও মিন্টু ওরফে বারোগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু।
১১৫ বারের মতো পেছাল সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল১১৫ বারের মতো পেছাল সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল
আগের তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই ব্যক্তি। মার্কিন একটি ল্যাবকে তাঁদের ছবি আঁকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও ওই ছবি পাওয়া যায়নি।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু রহস্য একই তিমিরে রয়ে গেছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক।
মামলার বাদী ও নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বছরে কিছু হয়নি। বর্তমানে শক্তিশালী তদন্ত সংস্থা পিবিআই তদন্ত করছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জেনেছি। আমরা কিছুটা আশাবাদী। তবে রহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছি না।’
নওশের আলম রোমান আরও বলেন, ‘আমরা চাই, যেন সুষ্ঠু তদন্ত হয়। প্রকৃত খুনি যারা, তাদের যেন চিহ্নিত করা হয়।’
তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা