• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৬-১১-২০২২, সময়ঃ দুপুর ০১:১৯

হেমন্তের ফুল দেব কাঞ্চন



কঙ্কন সরকার ►

কার্তিকে হঠাৎ একদিন চোখে পড়ল লাগানো গাছটিতে অনেকটা লাল রং এর ফুল ফুটে আছে। গাছটি কাঞ্চন। কাঞ্চন ফুল সম্পর্কে যা জানতাম তা হচ্ছে শ্বেতকাঞ্চন— যা বর্ষা ও শরতে ফুটে বেশি উজ্জ্বলতা ছড়ায়। আরেক প্রকার, রক্ত কাঞ্চন— যা বসন্তে ফুটে রং ছড়ায়। কিন্তু হেমন্তেও ফোটে কাঞ্চন যা আগে জানা ছিলনা। তারপর এর ওর কাছে জানতে চাই, গুগলেও সার্চ দেই।  জানতে পারি এটা দেবকাঞ্চন— যার ফুল হেমন্তে ফুটে শীত পর্যন্ত অব্যাহত রাখে। নিজেকে এত ভাল লাগল যে, শ্বেত কাঞ্চন, রক্ত কাঞ্চন সচরাচর দেখি কিন্তু দেব কাঞ্চন যে নিজের লাগানো গাছটিই হবে তা ভেবে। কাঞ্চন গাছ দেখে এর ভিন্নতা নিরূপণ করা মুশকিল। কারণ কাঞ্চনের সবকটি প্রজাতির গাছ দেখতে প্রায় একই রকম। যাহোক, একে নিয়ে জানার কৌতূহল জাগে। তবে শ্বেত কাঞ্চন ও রক্ত কাঞ্চন যত্রতত্র দেখা গেলেও (আমরাই এদুটো প্রজাতির বেশ কিছু গাছ লাগিয়েছি) দেব কাঞ্চন অত সুলভ নয়। একে রাঙা কাঞ্চনও বলা হয়।

বাংলাদেশে বনে-জঙ্গলে, পার্কে, বাগানে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোথাও কোথাও দেবকাঞ্চন এর দেখা মেলে। হেমন্ত থেকে শীত অবধি ফুল ফোটে। দেবকাঞ্চনে সাধারণত দুই রঙের ফুল ধরে। ফুলের রং হালকা গোলাপি আভাসহ সাদা, অন্যটি হালকা গোলাপি-বেগুনি। প্রস্ফুটন  উজ্জ্বলতা ততটা  প্রবল না হলেও সুঘ্রাণ আছে। এর ফুলের সাথে প্রজাপতি, মৌমাছির সখ্যতা দেখা যায়।  জানা যায়,

দেবকাঞ্চন মাঝারি আকারের অর্ধ চিরসবুজ গাছ। গাছ ৮-১০ মিটার উঁচু হয়। তবে মাঝেমধ্যে বড় আকৃতির গাছও চোখে পড়ে। পাতাসহ মাথা ছড়ানো থাকে। পাতা মাথার দিকে দুই দিকে বিভক্ত। লতির আগা চোখা বা ভোঁতা। ফুল ৬-৮ সেন্টিমিটার চওড়া, সুগ​ন্ধী। কয়েকটি পুষ্প একত্রে একটি ডাঁটায় থাকে। সারা গাছে ফুল ফোটে। যখন ফুল ফোটে তখন গাছটির আলাদা একটা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। দিন শেষে কিংবা পরদিন ঝরে পড়া ফুলে গাছতলাতেও সৌন্দর্য ছড়ায়। ফুল লম্বাটে, পাঁচটি পাপড়ি থকে। ফল শিমের মতো চ্যাপ্টা, এতে বীজ থাকে ৮ থেকে ১০টি। ফলে রং প্রথমে সবুজ ও পরিপক্বতা এলে কালচে খয়েরি রং ধারণ করে এবং শুকিয়ে গিয়ে একসময়ে আপনা আপনিই ফেটে গিয়ে বীজগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বীজের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়।

অনেক সময় কম বয়সী গাছেও ফুল ধরে। দেবকাঞ্চনের আদিনিবাস হিমালয়ের পাদদেশ ও আসামের পাহাড়ি অঞ্চল। তবে চীন, শ্রীলংকা ও মালয়েশিয়ায় দেবকাঞ্চনের দেখা পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশে এর বিস্তার বহুকাল আগের। আমাদের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে এ গাছ দেখা যায়।  তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই গাছ  এ অঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বজুড়ে। একেক দেশে একেক নামে পরিচিতিও পেয়েছে এই গাছ ও তার ফুল। এর মধ্যে হংকং অর্কিড ট্রি, পার্পল বহিনিয়া, ক্যামেলস ফুট, বাটারফ্লাই ট্রি, হাউয়াইয়ান অর্কিড ট্রি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। জানা যায়, দেবকাঞ্চনের বৈজ্ঞানিক নাম— Phanera purpurea. এটি ফ্যাবিসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ।

আয়ুর্বেদ শান্ত্র থেকে জানা যায়, রক্ত কাঞ্চনের কিছু ভেষজ গুণ রয়েছে। এর মূল বায়ুনাশক। ফুল রেচক রূপে ব্যবহৃত হয়। বাকল আমাশয়ে উপকারী। বাকলের ক্বাথ ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। কাঠ মাঝারি মানের শক্ত এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ও গৃহনির্মাণের উপযোগী। দেবকাঞ্চন গাছ বেশ কষ্ট সহিষ্ণু। এ গাছ রক্ষা করা দরকার।
সাধারণ সম্পাদক— সুপ্রকাশ সাহিত্য সংসদ ও সংগঠক—বৃক্ষসখা। সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।