- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ১১-১-২০২৪, সময়ঃ বিকাল ০৪:৩০
সুন্দরগঞ্জে ৫০ হাজার ছিন্নমূল মানুষের জন্য কম্বল বরাদ্দ ৬ হাজার
এ মান্নান আকন্দ, সুন্দরগঞ্জ►
দ্বিতীয় দফায় গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা, কন কনে ঠান্ডা ও শৈত প্রবাহের কারণে অসহায় ও ছিন্নমূল পরিবারগুলো কাবু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের ভাসমান পরিবারগুলো ঠান্ডায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সকল কার্যক্রম।
ঘন কুয়াশা এবং ঠান্ডায় অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ীরা যথা নিয়মে কর্মস্থলে যেতে পারছে না। যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। ঠান্ডার কারনে নানাবিধ রোগব্যধির প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ওষুধের দোকানগুলো রোগির ভিড় লক্ষা করা গেছে।
উপজেলা সমাজসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫০ হাজার ছিন্নমূল পরিবার রয়েছে। নিন্ম আয়ের এই পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে অসহনীয় ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিমান একেবারেই অপ্রতুল। চলতি মৌসুমে সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে। চরের ছিন্নমুল পরিবারগুলো খড় কুঁটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণ করছে। বিশেষ করে বৃদ্ধা-বৃদ্ধা, শিশু ও প্রসূতি মা’রা নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিত্বে জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আজকের তাপমাত্রা ১৩.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েরছ। কন কনে ঠান্ডা, হিমেল হাওয়া ও ঘণকুয়াশা অব্যাহত থাকবে।
হরিপুর ইউনিয়নের লক্ষিয়ার পাড়া গ্রামের ফরিদুল মিয়া জানান, গত কয়দিনের ঠান্ডায় চরের মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে বয়বৃদ্ধা, শিশু ও গর্ভবতি মা’দের নিদারুন কষ্ট হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার শীতবস্ত্র পাই নাই। ঠান্ডার কারনে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। অনেকে বাড়ির মধ্যে খড় কুটো জ্বালিয়ে বসবাস করছে।
অটোচালক আল-আমিন জানান, ঘন কুয়াশার কারনে অত্যন্ত ঝুকি নিয়ে যানবাহন চালাতে হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর অটো চালানো সম্ভম হচ্ছে না। প্রতিদিন কুয়ার কারেন দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকে।
জরমনদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার রায়, কন কনে ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার কারনে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি একবারেই কম। গত তিনদিন হতে সুর্য্যরে আলো দেখা যায়নি সুন্দরগঞ্জের আকাশে।
তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিয়নে ৩০০ কম্বল দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজণের তুলনায় একবারেই অপ্রতুল। তাঁর ইউনিয়নে ছিন্নমুল মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ৮ হাজার। শীতার্ত মানুষের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে চেয়ারম্যান ও নেম্বারদের। শীতে যে ভাবে জেঁকে বসেছে, তাতে করে শীতবস্ত্রের চাহিদা মেটাতে না পারলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তিনি প্রশাসনের নিকট অতিদ্রুত চাহিদা মোতাবেক শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা দেখা দিয়েছে। সরকারি ভাবে ৬ হাজার কস্বল পাওয়া পাওয়া গেছে, তা ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মেয়র ও চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। তবে শীতার্ত মানুষের চেয়ে শীতবস্ত্রের পরিমান অনেক কম।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সুর্বনা ইসলাম জানান, প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে হাপানি, এ্যজমা, নিমোনিয়া, পেটের পীড়া, স্বদি কাশিসহ নানাবিধ রোগীর সংখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুন হারে বেড়ে গেছে। মুলত ঠান্ডর কারণে এসব রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু, ও প্রসূতি মা’রা বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।