• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১৩-৫-২০২৪, সময়ঃ বিকাল ০৪:১৩

শেষ হলো গোবিন্দগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজা বিরাটের মেলা



গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে শেষ হলো হাজার পূন্যার্থীর পথভারে মুখরিত ঐতিহ্যবাহী রাজা বিরাটের যাত্রীমেলা। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে প্রথম রবিবার শুরু হয় এই মেলা। এরপর মাস জুড়ে প্রতি রবিবার হয় এই তীর্থযাত্রীর মেলা। 

মেলায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজারো তীর্থযাত্রীর আগমনে যেন প্রাণ ফিরে পায়। 

হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাজাবিরাট মেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য আগত তীর্থ যাত্রীরা পাপ মোচনের জন্য আলু-করলা সিদ্ধ দিয়ে হবিষ্যি অন্ন ভক্ষণ। কথিত আছে পৌরণিক কাহিণীর পঞ্চপান্ডব মৎস্য দেশের রাজধানী রাজা বিরাটে অজ্ঞাত বাসের সময় তারা নিজেদের শাপমুক্ত করতে আলু-করলা সিদ্ধ করে হবিষ্যি অন্ন ভক্ষণ করতেন। 

সেই থেকে এই মেলায় আগত দুরদুরান্ত থেকে আসা হিন্দু  সম্প্রদায়ের তীর্থ যাত্রীরা নিজেদের কল্যাণ কামনা করে এবং প্রয়াত পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান সদস্যদের আত্নার শান্তির জন্য হবিষ্যি অন্ন খেয়ে আসছে। 

প্রচলন রয়েছে যে হাঁড়িতে হবিষ্যি অন্ন রান্না করা হয় খাওয়া শেষে সেই হাঁড়ি চুলার পাশেই ভেঙে ফেলে হয়।  এই ভাবে প্রতি যাত্রীমেলার দিন  শত শত হাড়ি-পাতিল ভেঙে ফেললেও পরদিন সকালে এই হাড়ির কোন অবশিষ্টাংশ আর সেই স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়না। 

হিন্দু ধর্মাবলাম্বিদের মতে কোন অলৌকিক কোন ক্ষমতা একরাতের মধ্যেই হাড়ি-পাতিলের টুকরা অবশিষ্টাংশ সেখান থেকে সরিয়ে ফেলে এবং হবিষ্যিঅন্ন খাওয়ার জন্য শতবর্ষী যে বটগাছ রয়েছে তা ঝকঝকে এবং ময়লামুক্ত পরিস্কার করে ফেলে।

রাজাবিরাট এলাকার পিদুষ কুমার বর্মন বলেন আমার জন্মের পর থেকে এই মেলা দেখে আসছি। মেলার পরদিন তীর্থ যাত্রীদের  উচ্ছিষ্টাংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।আমরা বিশ্বাস করি এই মেলায় হবিষ্যি অন্ন ভোগে পাপমুক্ত হয়।

যাত্রী মেলার পরেই উপজেলার পশ্চিম এলাকায় এই মেলায়  আরো একটি আর্কষণ মিঠাই-মিষ্টান্নে পাশাপাশি কাঠের খাট, চকি টেবিল চেয়ারসহ গৃৃহস্থলির কাজের নানা সরঞ্জামাদির দোকান।  বিরাটের মেলাকে কেন্দ্র করে শশুড়রা জামাইদের নিমন্ত্রণ করে বাড়ীতে ডেকে আনে। এরপর মেয়ে-জামাইকে নতুন কাপড় দিয়ে মিষ্টিমুখ করানোর করানো হয়। শশুড়বাড়ী যাওয়ার সময় জামাইরা মেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুড় বাড়ীতে নিয়ে যায়। সবমিলিয়ে  বিরাট মেলাকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী এলাকায় থাকে উৎসবের আমেজ।

তবে মেলার জায়গা অবৈধ দখলদারীত্বে সংকুচিত হওয়ায় আগত তীর্থ যাত্রীদের রয়েছে বিস্তর অভিয়োগ।বগুড়ার দুপচাচিয়া থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা তীর্থযাত্রী হিমাংসু পোদ্দার  বলেন, প্রতিবছর মেলা হলেও এখানে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।জল সহ টয়লেট সমস্যা প্রকট। ঝড় বৃষ্টিতে নেই কোন নিরাপত্তা ছাউনি। অবিলম্বে এই সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদুষ্টি কামনা করছি।