• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ২২-১-২০২৪, সময়ঃ দুপুর ১২:৩৯

শীতের যেসব সবজি খেলে যে উপকার



মাধুকর ডেস্ক►

শীতের সবজির উপকারিতা অনেক। শীতকালীন সবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সবজি খেতে পারেন। 

জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মাসুমা চৌধুরী মনে করেন, শীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় কিছু শাক–সবজি রাখা উচিত। শীতে এক রঙের না খেয়ে বিভিন্ন রঙের শাক–সবজি খাওয়া দরকার। যা শরীরে বেশি ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের জোগান দেবে।

পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মাসুমা চৌধুরী বলেন, ‘শীতে যেসব সবজি পাওয়া যায়, সেসব সবজিতে পুষ্টিগুণ বেশি। ফুলকপির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থেকে বাঁচায়। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, যা খাবার হজম প্রক্রিয়া সহজ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়া এটি  ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। শিমে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। এ ছাড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন। গাজর আঁশযুক্ত পুষ্টিগুণে ভরা সবজি। গাজরের বিটা ক্যারোটিন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের টক্সিন জাতীয় উপাদান দূর করে। শাকসবজির সঙ্গে প্রচুর পানিও পান করুন। মনে রাখবেন সঠিক হাইড্রেশন শারীরিক ক্রিয়াকে সমর্থন করে এবং হজমে সাহায্য করে। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাঁরা মুলা খেতে পারেন। মুলায় জলীয় পরিমাণ বেশি থাকে। এ কারণে মুলা শরীরকে আর্দ্র রাখে। এ ছাড়া মুলা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা মূলা খেতে পারেন।’

শীতের ৫টি সবজির উপকারিতার কথা জেনে নেওয়া যাক

ফুলকপি

শীতকালের সবজির মধ্যে ফুলকপি অন্যতম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস ফুলকপি। ফুলকপির বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। ফুলকপির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে কোলাইন আছে, যা স্মৃতিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফুলকপিতে থাকা উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ এবং পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। ফুলকপিতে থাকা ফাইবার রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যে কেউ ফুলকপি খেতে পারেন। কারণ ফুলকপিতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম থাকে।

বাঁধাকপি 

বাঁধাকপি ভিটামিন সি, ফাইবার এবং ভিটামিন কে সমৃদ্ধ সবজি। বাঁধাকপিতে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায় বাঁধাকপি। বাঁধাকপিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের প্রদাহ দূর করে। যারা ওজন কমাতে চান, তাঁরা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখতে পারেন। বাঁধাকপি ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। 

শিম

শিমে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ফাইবার ও ভিটামিন ডি আছে। শিমে পাচক আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে শিম। শিমে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এই দুটি উপাদান আছে। এই দুটি উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। প্রচুর আঁশ থাকায় শিম কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাঁদের জন্য কম ক্যালরিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার হিসেবে শিম হতে পারে আদর্শ। এ ছাড়া ফুসফুস ভালো রাখে শিম।

মুলা

মুলা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি সবজি। ওজন কমাতে খাদ্যতালিকায় মুলা রাখতে পারেন। মুলায় প্রচুর ফাইবার আছে। এতে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়। এ ছাড়া শরীরে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে মুলা। মুলায় আছে পটাশিয়াম, যা শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে। মুলা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এতে আছে অ্যান্থোসায়ানিন, যা হৃদ্‌যন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মুলা শ্বাসতন্ত্রকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। মুলায় পটাশিয়াম, ফোলেট এবং ফাইবার রয়েছে। তাই পেটের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে মুলা। 

গাজর 

গাজরের গুণের শেষ নেই। গাজরে থাকা পুষ্টি উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধে এবং ক্যানসারের কোষ তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। চোখে ভালো রাখে গাজর। বার্ধক্যজনিত দৃষ্টিশক্তির ঝুঁকি কমাতে গাজর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে গাজর। গাজরে থাকা ফাইবারও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গাজর চুল পড়া কমায়, চুলকে শক্ত ও মজবুত করে। গাজরের ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন  সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বকের কোষ রক্ষা করে। গাজর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গাজরের আলফা ক্যারোটিন উপাদান হার্টের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।