- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ২২-২-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৩:১৩
শিক্ষক আছে শিক্ষার্থী নেই, স্কুল মাঠে গরু
নিজস্ব প্রতিবেদক ►
বেশ উন্নত ও জনবসতি এলাকা। যোগাযোগ মাধ্যমও ভালো। এখানে রয়েছে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও কিন্তু বাস্তবে নেই। শ্রেণি কক্ষে শূন্য শিক্ষার্থী। তবুও ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী বসে বসে বেতন-ভাতা তুলছেন। আর স্কুল মাঠ যেন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এমনি এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম- ‘বকসীগঞ্জ রানী দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নে বিদ্যালয়টি অবস্থিত।
সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সবগুলো শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থী শূন্য। বেঞ্চগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শুধু অফিস কক্ষে কয়েকজন শিক্ষককে খোস গল্পে দেখা গেছে। এই চিত্র প্রতিকার্য দিবসে বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, ওই এলাকায় নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর এমপিও ভূক্ত হয়। এরপর থেকে কোনমতো শিক্ষাক্রম চলছিল। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষক বোরহান আলী নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। রিজার্ভ ও সাধারণ ফান্ডের অর্থ আতœসাত, দাতা সদস্য পরিবর্তনের চেষ্টা, গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের পায়তারাসহ সিমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধ। এ নিয়ে এক সময়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকায় চলমান রয়েছে মামলা-মোকদ্দমা। যার কারণে প্রধান শিক্ষক বোরহান আলী প্রায় এক বছর ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না। বাড়িতে বসে পিয়নের মাধ্যমে শিক্ষক হাজিরা খাতায় শতভাগ উপস্থিতি স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন তিনি। আর কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও প্রতিষ্ঠানে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। এমনকি এই বিদ্যালয়ে নেই কোন ম্যানেজিং কমিটিও। রয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অভাব। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে।
কাগজ-কলমে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে ৮-১০ জনও পাঠগ্রহণ করে না। তবে শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় সন্তোষজনক উপস্থিতি দেখানো হয়। কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী ছাড়াই চলছে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এতে করে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছে অভিভাক ও স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ পদাধিকারে বিদ্যালয়টির সভাপতি ইউএনও। শিক্ষার্থী শূন্য প্রতিষ্ঠানে কীভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হচ্ছে সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।
আতাউর রহমান প্রামানিক নামের এক অভিভাক বলেন, স্কুলটির নানা সমস্যার কারণে কারও সন্তানকে এখানে ভর্তি করাতে চান না। কতিপয় ছাত্রী ভর্তি হলেও তারা স্কুলে আসে না। একদম শূন্য শিক্ষার্থী দিয়ে বিদ্যালয় চালানো হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের দেখা দরকার। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শরিফা খাতুন ও বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা সবাই অন্য প্রতিষ্ঠানে কোচিং করে। তাই এখানে অনেকে পাঠগ্রহণ করে না। আর অসুস্থতার কারণে হেড স্যার স্কুলে আসেন না।
বকসীগঞ্জ রানী দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে সেগুলো আদৌ সত্য নয়। সহকারি শিক্ষকরা স্কুলে অনিয়মিত উপস্থিত কারনে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা সেটি তার জানা নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগমের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।