- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ২-৭-২০২৩, সময়ঃ বিকাল ০৪:০৮
মনছুরের কপালে জোটেনি মিশুকভ্যান রিকশার প্যাডেলে জীবনযুদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক ►
অতিদরিদ্র মুনছুর আলী (৮০)। এক সময়ে অন্যের কাছে হাতপেতে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই পেশাটি নিজেকে খারাপ লাগার কারণে একটি প্যাডেল চালিত রিকশা কেনেন। এই রিকশার প্যাডেল চালিয়ে পেটভাত যোগাতে হচ্ছে তাকে। বর্তমানে বয়সের ভারে কমেছে শারিরীক শক্তি। কিছুক্ষণ প্যাডেল ঘুরালে যেন দম আটকে যায় তার। তবুও থেমে নেই জীবনযুদ্ধ। এ থেকে একটু স্বস্তি পেতে সরকারের ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় একটি ব্যাটারি চালিত মিশুকভ্যানের আকুতি জানালেও আজও তার কপালে জোটেনি সেই ভ্যানটি।
বৃদ্ধ এই মুনছুর আলীর বাড়ি গাইবান্ধার সাদুলাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের শালাইপুর গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত টাঙ্গারু শেখের ছেলে। সম্প্রতি তার সঙ্গে দেখা হয় সাদুল্লাপুর শহরে। এ শহরে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন। গন্তব্যে না পৌঁছাতে শরীর হাপিয়ে ওঠে তার। মাঝে মাঝে হেঁটে টেনে নিয়ে চলেন রিকশা।
খোঁজ জানা যায়, একদম ছিন্নমূল পরিবারের মুনছুর আলীর। স্ত্রী-ছেলে ও তিন মেয়েসহ ৬ সদস্যের সংসার। অন্ন-বস্ত্র যোগাতে তিন চাকার রিকশায় সহায় সম্বল তার। দীর্ঘ বছর ধরে হাতে হ্যান্ডেল আর পায়ে প্যাডেল মেরে রিকশা চালিয়ে কোনমোত জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। কয়েক বছর আগে তার রিকশা রেখে নামাজে গেলে চুরি হয়ে যায় সেটি। ফলে থমকে যায় জীবনযুদ্ধ। এরই মধ্যে গাইবান্ধার এক চিকিৎসক কিনে দেন একটি রিকশা। তবে সেটি কোন ব্যাটারী চালিত নয়।
তবুও জীবিকার তাগিদে পায়ে প্যাডেল মেরে যাত্রী বহনে অবিরত চালিয়ে আসছেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই উপার্জনের টাকা দিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলেটিও বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই তার। এখন স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের ভূমিতে বসবাস। বৃদ্ধ বয়সেও নেই কোন অবসর। সকাল হলেই রিকশা নিয়ে বের হতে হয় তাকে। যাত্রী নিয়ে ছুটেন নানা দিক। এর পাশাপাশি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে ভুলেনি কখনো। তাকে রিকশা নিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে। তবে যাত্রী উঠে কম। কারণ, বার্ধক্য বয়স আর প্যাডেল চালিত রিকশা। তাই যাত্রীরা উঠতে অনাগ্রহী। খুব মিনতি করে যাত্রী তুলে নেন এই বৃদ্ধ মনুছুর আলী। এভাবে দিন শেষে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনমতে চলছে জীবিকা। যেনো নুন আন্তে পান্থা ফুরায় অবস্থা তার। শেষ বয়সেও মুনছুর আলী তপ্ত রোদ আর শীত-বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের আশায় রিকশা নিয়ে ছুটে চলা তার।
ভুক্তভোগি মনছুর আলী বলেন, আগের অন্যের কাছে হাতপেতে চলতেন। সেই কাজটি ছেড়ে প্যাডেল চালিত রিকশা চালাই। বুড়ো হওয়ার কারণে আমার রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। তারপরও রিকশাটি যদি ব্যাটারী-চার্জার চালিত হতো, তাহলে হয়তো কিছু যাত্রী পাওয়া যেতো। কিন্তু টাকার অভাবে গাড়ীতে ব্যাটারী লাগাতে পারছি না। তাই সরকারের দেওয়া ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় আমাকে একটি ব্যাটারি চালিত শিশুকভ্যান দিলে উপকৃত হতাম। এছাড়া যে কেউ যদি সযোগিতা করতেন তাহলে হয়তো কিছুটা আরামে গাড়ী চালাতে পারতাম।
রাজু মিয়া নামের এক এক জানান, মুনছুর আলী যে বয়সে অবসর সময় কাটানোর কথা, সেখানে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে অবিরাম ছুটে চলছেন রাস্তা-ঘাটে। ব্যাটারীবিহীন এ রিকশায় যাত্রী নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও তবুও জীবিকার তাগিদে ছুটছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তরে। পথচলা কঠিন হলেও পৃথিবীতে থেমে থাকার লড়াইয়ে থেমে নেই এই বৃদ্ধের।
বনগ্রাম ইউনিয়ন পরষদের (ইউপি) সদস্য ফরহাদ আকন্দ বলেন, মুনছুর আলীকে চিনি ও জানি। জীবিকার সন্ধানে বার্ধক্য বয়সেও তাকে প্যাডেল মেরে রিকশা চালাতে হচ্ছে। রিকশাটি ব্যাটারী চালিত হলে ভালো হতো। তাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোহিতা করা দরকার।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, মুনছুর আলী যেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। জুলাই মাসের মধ্যে ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় তাকে একটি শিশুকভ্যানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।