• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১-৫-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১০:২০

ভালো নেই বন্ধ হয়ে যাওয়া রংপুর চিনিকলের শ্রমিকেরা



মনজুর হাবীব মনজু, মহিমাগঞ্জ

ভালো নেই গাইবান্ধার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারি শিল্প কারখানা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলে চাকরি হারানো শ্রমিকেরা।

একটা সময় জাঁকজমকপূর্ণভাবে মে দিবস পালন করা শ্রমিকরা এখন পেটের ভাতের জোগাড়ে হিমশিম খেয়ে ভুলেই গেছেন আন্তর্জাতিক এই দিনটির কথা। 

লোকসান কমাতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার কথা বলে বিগত ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন ১৫টির মধ্যে যে ছয়টি চিনিকলে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রায়াত্ত এ চিনিকলটি। এর ফলে বেকার হয়ে পড়েন এখানে কর্মরত হাজারখানেক মানুষ। 

বারবার মিল চালুর কথা বললেও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় দিন দিন তাদের মাঝে বাড়ছে এখন হতাশা আর অসহায়ত্ব।

সে সময় ২০২০-২১ বার্ষিক আখ মাড়াই মৌসুম শুরুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও সর্বোচ্চ মাড়াইক্ষমতা ও বিপুল পরিমাণ জমিতে দন্ডায়মান আখ রেখে একেবাওে শেষ মুহূর্তে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ আখচাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীরা ব্যাপক আন্দোলন করেন। কিন্তু শ্রমিক আন্দোলন বা চাষিদের করুণ আকুতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিদের। 

তাঁরা বলেন, তখন আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারী ও চাষিদের উদ্দেশে দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, আধুনিকায়নের মাধ্যমে খুব দ্রুতই আবার চালু করা হবে এই চিনিকলসহ সব কয়টি চিনিকল। কিন্তু প্রায় ১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা এবং ৫০ হাজার চাষি ছাড়াও বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা অর্জনের মাধ্যম এই রংপুর চিনিকলটি চালু হয়নি চার বছরেও। বরং এ চিনিকলের স্থায়ী চাকরিজীবীদের একাংশ, গাড়ি, যন্ত্রাংশ ও নানা প্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্য চিনিকলে। 

কাজ হারানো ‘কাজ নাই, মজুরি নাই’ (কানামনা) চুক্তিভিত্তিক অর্ধসহস্রাধিক শ্রমিকরা এখন পেটের দায়ে ভ্যান-রিকশা চালনাসহ বিভিন্ন কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ কেউ মিল চালু হওয়ার আশায় বুক বেধে থাকলেও, এখন সেই আলোটুকুও ফিকে হয়ে আসছে। এর ফলে অনিশ্চয়তা আর অসহায়ত্ব বাড়ছে শ্রমিকদের।

একদার উজ্জ্বল জীবনের নিশ্চিত মাধ্যম রংপুর চিনিকলের শ্রমিকরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বর্তমানে চাকরি হারিয়ে তাঁরা কেউ বা হয়েছেন রিক্সা-ভ্যান চালক। কারও ঠাঁই হয়েছে দিনমজুরির পেশায়। বয়সের কারণে অধিকাংশ শ্রমিকই এখন মানুষের গলগ্রহ হয়ে বাঁচতে চেষ্টা করছেন আপ্রাণ।

রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ফারুক হোসেন ফটু জানান, এই চিনিকলে এক সময় জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হতো মে দিবস। এখানে আর মে দিবসের কোন কর্মসূচি পালন করার কেউ নেই। এখন চাকরি হারানো এ চিনিকলের শ্রমিকরা শুধু অতীত স্মরণ করেই প্রতিদিনের গ্রাসাচ্ছাদনের চেষ্টায় দিন পার করেন। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের কৃষক-শ্রমিকদের স্বার্থের বিপরীতে গিয়ে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব চিনি শিল্প বন্ধ করে দেওয়ার গভীর চক্রান্ত চলছে। কৃষক ও শ্রমিকবান্ধব বর্তমান সরকার অসাধু সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের এই জাল ছিন্ন করে পুনরায় চিনিকলটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।