• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ৮-৭-২০২৩, সময়ঃ সন্ধ্যা ০৬:০৩

বালাসীঘাটে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার ও নৌকা ভ্রমন



ভবতোষ রায় মনা ►

বালাসীঘাটে ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমন পিপাসুদের নৌকা ভ্রমন যেন বিষাদে পরিণত না হয়। নৌপথে মাঝে মধ্যেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও জীবন বাঁচানোর জন্য নৌকাগুলোতে নেই পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট। শুধু তাই নয়, বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে নৌকাগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ছাউনি, প্রচ- রোদে ছায়া পাওয়ার মতো নেই কোন ব্যবস্থা। 

শুধু ভ্রমন পিপাসুরা না, এভাবেই প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে পারাপার হচ্ছে শতশত মানুষ। নৌকাগুলোতে জীবন বাঁচানোর কোন উপকরণ না থাকায় যমুনা নদীর গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট, ফুলছড়ি ঘাট, হাজিরহাট ও সাঘাটা উপজেলা বাজারের নৌঘাট থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ফুটানির বাজার নৌ-রুটে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। শুধু এ নৌ-রুটেই নয় গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর ১৬৫টি চরের প্রায় চার লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন এসব নদীপথেই।

প্রতি বছর মুসলিম সম্প্রদায়ের দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ইংরেজি নববর্ষ ছাড়াও প্রতিদিনেই গাইবান্ধার বালাসীঘাট নদীর পাড়ের বালাসী লঞ্চঘাট টার্মিনালের ভিতর ভ্রমনপিপাসুদের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ভীর জমে। শহরে একঘেয়েমি লাগায় মানসিক প্রশান্তিসহ মন ও শরীরকে শীতল করতে বালাসীঘাটে ছুটে আসে ভ্রমনপিপাসুরা। বালাসীঘাটের সুন্দর দৃশ্য ও মনোরম পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি অনেকেই স্ত্রী, সন্তান ও আত্বীয়-স্বজন নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা, লঞ্চ, কিংবা ডিঙি নৌকায় ঘুরতে পছন্দ করেন। 

কিন্তু সাঁতার জানলেও নদীতে বা সমুদ্রে নৌযান ভ্রমণে গেলে, সাগর-হাওর-লেক বা ঝর্ণা এলাকায় নামলে বা সাঁতার কাটতে গেলে, বন্যা বা পানির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গেলে, খরস্রোতা কোথাও গেলে ঝুঁকিপূর্ণ নৌরুটে যাতায়াতের সময় সাঁতার জানলেও যাত্রী ও চালকসহ সকলের শরীরে লাইফ জ্যাকেট থাকতে হবে। 

ভ্রমন পিপাসু নীলা ইসলাম (৩৫) বলেন, প্রতিটি লাইফ জ্যাকেটের সর্বনিম্ন দাম ৪০০ টাকা হলেও নৌকাগুলোতে নেই জীবন বাঁচানোর পর্যাপ্ত উপকরণ। আমরা কখনও নৌদুর্ঘটনার কথা চিন্তাই করিনি। আসলে জীবনের নিরাপত্তাটা আগে।

বালাসীঘাটে ঘুরতে আসা রমানাথ বর্মন বলেন, পরিবার নিয়ে নৌকায় উঠে ভ্রমন করেছি, তবে নৌকায় কোন লাইফ জ্যাকেট ছিল না। আর এমনিতেই নদী ছিল উত্তাল। ছিল ঢেউ, বড় বড় পাক ও স্রোত। আসলেই নদীপথে যাতায়াত করাই বিপজ্জনক। 

বালাসীঘাটের নৌকা চালক দেলোয়ার মিয়া বলেন, ঈদের পর সবাই ঘুরতে আসে, নৌকায় চরলে হামারঘরে একটু কামাই বেশি হয়। বালাসীঘাটে আসা লোকজন নৌকায় করে খারজানির চড়সহ বিভিন্ন চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জনপ্রতি আসা ও যাওয়া ৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। আপনের নৌকা লাইফ জ্যাকেট কেউ জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন অল্প সময়ের জন্য ওগলা লাগে না। আর হামরা মেলা দিন হলো নৌকা চালাই। হামার বয়সে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।

নৌযাত্রী মনোয়ার হোসেন বলেন, নৌকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে বেশি। প্রচণ্ড রোদে কষ্ট পেতে হয় আমাদের। এজন্য উঁচু করে যতোটা সম্ভব, নৌকার উপরে কিছু একটা দিয়ে নৌকায় ছায়া পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া চলাচল করছে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে। বৃষ্টি আসলেও নেই কোন ব্যবস্থা।

নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৌকাচালক বলেন, রোদ থেকে রক্ষা পেতে নৌকাগুলোতে ছইয়ের (বাঁশ দিয়ে তৈরি) ব্যবস্থা করলে যাত্রীরা উপরে ওঠার জন্য মারামারি পর্যন্ত করে। এজন্য ছইগুলো খুলে রাখা হয়েছে।

বালাসীঘাট কর্তৃপক্ষ বলেছেন, লাইফ জ্যাকেট সব যাত্রীকে তো দেয়া সম্ভব না। লাইফ জ্যাকেট আছে একটা-দুইটা। তাৎক্ষণিকভাবে যাতে একটা লোককেও সেভ করতে পারি। প্রতিটা নৌকাতেই পর্যাপ্ত পলিথিন দেয়া আছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ আগস্ট বাহাদুরাবাদ থেকে বালাসীঘাট আসার পথে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া এলাকায় নৌকা থেকে যমুনা নদীতে পড়ে গিয়ে রজ্জব আলী, গত বছরের ১৪ অক্টোবর মহড়া দেয়ার সময় সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে একটি নৌকাবাইচের নৌকা ডুবে এম এ লতিফ ও ফুলমিয়া, ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে যমুনা নদীতে নৌকাডুবে মোর্শেদা আকতার নামের পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী, ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের কড়াইবাড়ীর চর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবে তাসলিমা বেগম, আইতুল্যা ও সোহরাব মিয়া, ২০১৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সাঘাটা উপজেলার হাসিলকান্দি এলাকায় যমুনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবে ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি ও ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ফুলছড়ি উপজেলায় নৌকা থেকে যমুনা নদীতে পড়ে গিয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান লিটন মারা যান।