• মাধুকর প্রতিনিধি
  • তারিখঃ ১-৪-২০২৪, সময়ঃ সকাল ১১:১২

পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে কলেজ ছাত্রের বাজিমাত



সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর►     

দিনাজপুরের বিরলে ইউটিউব দেখে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে সফলতা পেয়েছেন কলেজ ছাত্র মিলন ইসলাম ও তাঁর প্রতিবেশী মামা কলিনী কান্ত রায়। মামা ভাগিনার এই সাফল্য দেখে অনেকেই এখন পেয়াঁজের বীজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে । প্রথম দুই বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেও সাড়ে পাঁচ একর জমিতে যৌথভাবে পেয়াজ বীজের আবাদ করেছেন মামা ভাগিনা । 

পেঁয়াজের ক্ষেত দেখলেই এখন মন ভরে যায় । কারন প্রতিটি পেয়াজ গাছে সাদা ফুলের টপর পড়ে আছে । সেই সাদা ফুলের টপর বাতাসে দোল গাচ্ছে । মৌমাছিরা গুন গুন করছে আর শ্রমিকেরা  সাদা পেয়াজের ফুলের সাথে পরাগায়ন ঘটনোর কাজ করছে । আর আগাছা পরিস্কার ও পানির সেচ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা ।  প্রতিদিন পেয়াজের বীজের জমিতে ১৫ থেকে ১৮ জন  নারী পুরুষ শ্রমিক কাজ করছে । 

বিরল উপজেলার ধামইর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বর্গাচাষি মনজুরুল ইসলামের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মিলন ইসলাম ইউটিউবে পেয়াজের বীজ চাষ লাভ জনক হওয়ায়  পড়াাশোনার পাশাপাশি বাবাকে মাঠের কাজে সহায়তা  করেন। ২০১৮ সালে এসএসসি পাসের পর অর্থের অভাবে মিলনের পডাশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম । মাঠে কাজের পাশাপাশি পিতার দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে ভাবতে থাকেন। একদিন ইউটিউবে পেয়াজের বীজ উৎপাদন ও ভালো দামের বিষয়টি জানতে পেরে এ বীজ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার এলাকায় পেয়াাজের বীজ উৎপাদন না হওয়ায় কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না।

ঠিক এমন সময়  উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মসলাজাতীয়  ফসল উৎপাদন বিষয়ে ট্রেনিংয়ে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে ডাক পড়ে যায় তাঁর বাবা মঞ্জুরুল ইসলামের । বিষয়টি জানতে পেরে বাবার পরিবর্তে মিলন ইসলাম  নিজেই প্রতিবেশী মামাকে সঙ্গে নিয়ে  প্রশিক্ষন কর্মশালায় যোগ দেন। প্রশিক্ষণ পেয়ে চোখের সামনে সোনালি স্বপ্ন ভাসতে থাকলেও বাস্তব সম্মত জ্ঞান ও প্রয়োজনীয়  অর্থের অভাবে কাজ শুরু করতে পারছিলেন না কলেজ পড়ুয়া ছাত্র  মিলন ইসলাম । কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি স্বপ্ন । রাতে ঘুমাতে দেয় না মিলন ইসলামকে । 

শুরুতেই মামা কলিণী কান্ত রায় কে সাথে নিয়ে মিলন ইসলাম ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়  ফরিদপুর, পাবনাসহ বেশ কয়েকটি  জেলায় পেয়াজের বীজ উৎপাদন করার বাস্তব  অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। হাতে নগদ অর্থ না থাকায়  প্রথমবার জমি বর্গা নিতে ও খরচ জোগান দিতে বাড়ীর  গরুও বিক্রি করে দেন মিলন ইসলাম ।  অনেক প্রচেষ্টার পরে উপজেলা কৃষি অফিসারের সহায়তায়  ২০২২ সালে যৌথভাবে তাঁরা  সাড়ে তিন একর জমি বর্গা নিয়ে  প্রথমবারের মতো পেয়াজের বীজ উৎপাদন করেন। প্রথম বছরেই সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে ১০ লাখ টাকার পেয়াজ বীজ বিক্রি করেন তাঁরা।

এদিকে পেয়াজের বীজ উৎপাদনে সচ্ছলতা ফেরায়  আবারও পড়াাশোনায় ফিরেছেন মিলন ইসলাম । বর্তমানে দিনাজপুর কাদের বক্স মেমোরিয়াল ( (কেবিএম)  কলেজে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয়  বর্ষের শিক্ষার্থী মিলন ইসলাম বলেন, ‘পেয়াজবীজ চাষ করে প্রথম বছরেই ভালো লাভ পাই। ইতিমধ্যে লাভের টাকায়  দেড় একর জমিও কিনেছি। চলতি মৌসুমে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়  প্রতি একরে খরচ বেড়ে দাড়িয়েছে আড়াই লাখ টাকায় । এ বছর আবহাওয়া  ভালো থাকায়  একরে ৪০০ কেজি করে ফলন পাওয়ার  আশা করছি । বাজার ভালো থাকলে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার বীজ উৎপন্ন হবে বলে আশা করছি।’

বিরল উপজেলা  কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তফা  হাসান ইমাম জানান, আধুনিক প্রযুক্তি মানুষকে সাফল্য পৌছে দিয়েছে । তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মিলন ইসলাম । তার সাফল্য দেখে অনেকেই এখন বেকার যুবকেরা পেয়াঁজের বীজ চাষে আগ্রহী হচ্ছে । জেলায় ১০ হেক্টর জমিতে এখন পেয়াঁজের বীজ চাষ হচ্ছে । এদিকে  মিলনকে বীজ বাজারজাতকরণের লাইসেন্স করে দেওয়া  হচ্ছে। আশা করি তারা  আরোও  সুফল পাবে।