- মাধুকর প্রতিনিধি
- তারিখঃ ১৫-১২-২০২২, সময়ঃ বিকাল ০৩:৩৫
পীরগঞ্জের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কবি আফছার পেটের দায়ে এখন ভিক্ষে করে
পীরগঞ্জ(রংপুর)প্রতিনিধি ►
গান গজল আর স্ব-রচিত কবিগান গেয়ে যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক সময় লোকজনকে আনন্দ দিত, মাতিয়ে রাখতো আসর, রুঢ় বাস্তবতায় আজ সে জীবিকার তাগিদে ভিক্ষে করে। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়নের নন্দরাম ফতেহপুর (কুটিপড়া) গ্রামের মৃত আসগর আলীর পুত্র আফছার আলী(৬২)। কিশোর বয়স থেকেই গান বাজনার প্রতি ঝুঁকে পড়ে আফছার আলী। ঢোলক বাজিয়ে গান গজল আর কবি গান পরিবেশন করে এক সময় নিজেই কবি গান রচনা করতে শুরু করে। স্থানীয় মুখরোচক কাহিনীকে অবলম্বন করে তার রচিত কবি গান গুলো এক সময় এই এলাকায় বেশ জনপ্রীয় হয় ওঠে।
বিশেষ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর তার রচিত কবি গান, পাক সেনাদের ভয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া,রাজাকারদের ভুমিকা আর হটকারিতা গুলো সে গানের মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় যে ভাবে বর্ণনার মাধ্যমে চিত্রায়িত করেছে, তা বাস্তব ঘটনাকেও হার মানিয়েছে। এক সময় বিভিন্ন হাট বাজারে এগুলো পরিবেশন করে আসর জমিয়ে তুলতো আফছার আলী। পীরগঞ্জ উপজেলার হাট বাজার গুলো ছাড়াও রোজ আশপাশের উপজেলার বড় বড় হাট বাজার গুলোতেও আসর জমাতো সে। আসর শেষ হলেই উপস্থিত লোকজন আগ্রহ ভরে ২/১ টাকা করে তার হাতে গুঁজে দিত। এতে প্রায় প্রতিদিন এক থেকে দেড়’শো টাকা রোজগার হতো। যা দিয়ে অনায়াসে সে সময় তার সংসারের যাবতীয় প্রয়োজন মিটতো। বিশ বছর বয়সে বিয়ে করলেও আফছার আলীর সংসারে কোন ছেলে পুলে নেই।
ছোট ভাইয়ের এক মেয়ে কে দত্তক নিয়ে লালন পালনের পর উপযুক্ত বয়সে বিয়েও দিয়েছে। স্ত্রী বিয়োগের পর বেশ কয়েক বছর অতিবাহিত হয়েছে। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়ায় আজ তার হাতে ঢোলক এর পরিবর্তে ঠাঁই পেয়েছে হাটাচলার অবলস্বন হিসেবে একটি লাটি আর অপর হাতে ভিক্ষের ঝুলি।
হাতের লাঠিকে অবলম্বন করে রোজ ১৫/২০ কি:পথ মাড়িয়ে রোজগার হয় মাত্র ৪০/৫০ টাকা। বর্তমানে তাও সম্ভব হয় নয়, এজন্য প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা সদরে এসে কোন এক স্থানে বসে অপেক্ষা করে। হাত পাতে অন্যের কাছে। কারও করুনা হলে ৫/১০ টাকা হাতে গুজে দেয়। যা দিয়ে তার সংসারের চাকা ঘোরাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। যে কারনে অনাহার আর অর্ধাহার এখন তার নিত্য সঙ্গি। এক সময় যার গান শুনে শতশত লোকজন জড়ো হতো, সেই লোকজনের কেউই আর এখন তার দিকে ফিরেও তাকায় না। জীবন যেন আর চলে না। তাছাড়া চলাফেরাতেও সীমাবদ্ধতা এসেছে। আগের মতো আর চলতেও পারছে না সে। জীবন যুদ্ধে তাই এখন পরাজিত সৈনিক আফছার আলী। অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার দু’চোখে এখন শুধুই অন্ধকার !